শাড়ি, পাঞ্জাবী- মুসলমানদের পোষাক নয়, হিন্দুদের পোষাক।
শাড়ি, পাঞ্জাবী- মুসলমানদের পোষাক নয়, হিন্দুদের পোষাক :
মুসলিম নারীরা শাড়ির সাথে আবার হিজাবও পরিধান করে, কিন্তু শাড়ি পরায় তারা যে হিন্দু কালচার পালন করে চলেছে, সেই জ্ঞান তাদের নেই। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে পড়ুন নিচের প্রবন্ধটি-হিন্দুদের পোষাক পাঞ্জাবী প’রে মুসলমানরা দৈনন্দিন নামাজ বা জুম্মাবারের নামাজ বা ঈদের নামাজ পড়ে আর নিজেদেরকে মুসলমান ভাবে। এর চেয়ে বড় ভণ্ডামী কী, বা আর কে আছে ?
পাঞ্জাবীকে হিন্দুদের পোষাক বলায়, অনেকেই হয়তো বিস্মিত হয়েছেন বা অবাক হয়েছেন; কারণ, এই ধরণের কথা আগে কেউ কোনো দিন শোনেন নি বা কারো কখনো মনেও আসে নি। কিন্তু পাঞ্জাবী যে হিন্দুদেরই পোষাক, সেটা যেমন এই প্রবন্ধে আমি প্রমাণ করে দেবো, তেমনি এটাও প্রমাণ করে দেবো যে- পাঞ্জাবী, কোনো অবস্থাতেই মুসলমানদের পোষাক নয়।
হিন্দুদের বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পর্কে, আশা করছি, ছোট বড় সবার কমে বেশি ধারণা আছে; এই বিয়ে একটি ধর্মানুষ্ঠান এবং এতে বরের যে পোষাক থাকে তা হলো ধুতি ও পাঞ্জাবি। হিন্দুদের বিয়ে যে একটি ধর্মানুষ্ঠান, এর প্রমাণ হলো- এই বিয়েতে বর ও কনেকে উপবাস থাকতে হয়, আর উপবাস হিন্দু ধর্মানুষ্ঠানের একটি অংশ। এর বিপরীতে পৃথিবীর সকল জাতির বিয়ে হলো একটি যৌনচুক্তি, যেখানে নির্দিষ্ট কিছু শর্তসাপেক্ষে দুইজন নারী পুরুষ একে অপরের সাথে এক ঘরে বসবাস করার সামাজিক অনুমতি লাভ করে।
হিন্দুদের বিয়ে যেহেতু ধর্মানুষ্ঠান এবং সেই অনুষ্ঠানে যেহেতু বরকে পরতে হয় ধুতি-পাঞ্জাবি, সেহেতু এটা প্রমাণিত যে- পাঞ্জাবি হলো হিন্দুদের পোষাক। কিন্তু এর বিপরীতে দেখা যাক, পাঞ্জাবি কোনোভাবে মুসলমানদের পোষাক হতে পারে কি না ?
আরব বা মধ্যপ্রাচ্য, যেসব দেশের প্রধান ভাষা আরবি, সেসব দেশের কোনো মুসলমান পুরুষকে কখনো পাঞ্জাবি পরতে দেখা যায় না, তারা প’রে বোরকার সাদা সংস্করণ জোব্বা; ইসলামের প্রবর্তক মুহম্মদ এই পোষাকই পরতো এবং তারপর থেকে তাকে অনুসরণ করে এ্যারাবিয়ান মুসলমানরা এই পোষাকই প’রে থাকে। এই তথ্য থেকে এটা প্রমাণিত যে, মুসলমানদের ইসলামি পোষাক জোব্বা, কোনোভাবেই ধুতি সেটের পাঞ্জাবি নয়।
তাহলে এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, মুসলমানরা কিভাবে পাঞ্জাবিকে নিজেদের পোষাক বলে ভাবতে এবং ব্যবহার করতে লাগলো, যার প্রভাবে কোনো হিন্দু যখন সাধারণভাবে পাঞ্জাবি প’রে তখন তাকে মুসলমানরা আধা মুসলমান ব’লে ভাবে বা সেই হিন্দুকে ইসলামিক কালচার পালনকারী হিসেবে মুসলমানরা মনে করে ?
প্রাচীনকাল থেকেই সারা পৃথিবীতে যে ধর্মটি ছিলো এবং এখনও ভারতবর্ষসহ তার আশে পাশে যে ধর্মটি টিকে আছে, সেটা হলো সনাতন মানব ধর্ম, যার প্রচলিত নাম হিন্দুধর্ম। এই সূত্রে সম্রাট অশোকের পূর্বে এই বাংলায় একমাত্র ধর্ম ছিলো সনাতন এবং সম্রাট অশোকের বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন করার ফলে, তার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার প্রায় দুই তৃতীয়াংশ মানুষ বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন করে ফেলেছিলো; এর ফলে বাংলায় বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী হয় দুই তৃতীয়াংশ, হিন্দু থাকে এক তৃতীয়াংশ। খ্রিষ্টীয় ৮ম শতাব্দীতে শঙ্করাচার্যের প্রচেষ্টায় বর্তমান ভারতের দুই তৃতীয়াংশ বৌদ্ধের প্রায় সবাই হিন্দু ধর্মে প্রত্যাবর্তন করে, কিন্তু বাঙ্গালি বৌদ্ধরা সেই সময় হিন্দু ধর্মে ফিরে আসেনি বা আসার সুযোগ পায় নি।
বাংলার এই দুই তৃতীয়াংশ বৌদ্ধের প্রায় সবাই, বাংলায় মুসলিম শাসন শুরু হলে, বিভিন্ন কারণে ইসলামে কনভার্ট হয়। প্রথমে হিন্দু, পরে বৌদ্ধ এবং তারপর ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার ফলে বাঙ্গালি মুসলমানদের মধ্যে পোষাকেরও বিবর্তন হয়, কিন্তু সেটা পুরোপুরি নয়, আংশিক এবং সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর এই পোষাকের বিবর্তনের প্রভাব পরে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপরও।
সনাতনী হিসেবে এই বাংলার প্রতিটি পুরুষের আদি পোষাক ছিলো ধুতি ও পাঞ্জাবি, কিন্তু গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চল ব’লে, ধুতি ও পাঞ্জাবির মধ্যে ধুতিই ছিলো প্রধান; কারণ, এক ধুতি দিয়ে অনায়াসেই পুরো শরীর ঢেকে ফেলা যেতো বা যায়, অন্যদিকে লোকজন পাঞ্জাবি পরতো শুধু কোনো উৎসবে বা কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সময়।
সম্রাট অশোকের প্রভাবে বাংলার যেসব হিন্দু, বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন করেছিলো, তারা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের অনুসরণে প্রথমে ধুতি ছেড়ে, ধুতির অর্ধেক কাপড়, যাকে বলে ‘চীবর’ সেটা দিয়ে লুঙ্গি স্টাইলে পরতে শুরু করে; আর পাঞ্জাবি যেহেতু সব সময় পরতে হতো না, শুধু উৎসব উপলক্ষে মাঝে মাঝে পরতে হতো, তাই পাঞ্জাবির ব্যাপারে সেই ধর্মান্তরিত বৌদ্ধরা ছিলো কিছুটা উদাসীন এবং প্রয়োজনে তারা সেই পাঞ্জাবিকেই লুঙ্গি স্টাইলের নিম্নাংশের কাপড়ের সাথে পরতে থাকে।
বর্তমানে মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত লুঙ্গি এবং বৌদ্ধদের লুঙ্গির মাঝে কিছুটা পার্থক্য আছে। বৌদ্ধদের লুঙ্গি কখনোই সেলাই করা ছিলো না, এখনও নেই; সেটা জাস্ট একখণ্ড চাদরের মতো, যেটা এখনও বৌদ্ধ নারী পুরুষ নির্বিশেষ পরে থাকে; কিন্তু সেই লুঙ্গিই মুসলমানরা বাড়তি কিছু সুবিধার জন্য দুই মাথা এক সাথে জুড়ে সেলাই করে পরিধান করে।
যা হোক, বাংলায় মুসলিম দুঃশাসন শুরু হলে, সেই ধর্মান্তরিত বৌদ্ধরাই আবার বিভিন্ন কারণে ইসলামে কনভার্ট হয়, কিন্তু মুসলমানদের প্রকৃত পোষাক জোব্বা-পায়জামা না প’রে বৌদ্ধ সমাজে প্রচলিত লুঙ্গিকেই তারা সেলাই করে একটু রূপ পরির্তনের মাধ্যমে পরতে শুরু করে, কিন্তু পাঞ্জাবির ক্ষেত্রে বৌদ্ধরা যে নীতি গ্রহন করেছিলো, মুসলমানরাও সেই একই নীতি গ্রহন করে, ফলে মুসলমানদের সাধারণ পোষাক হয়ে উঠে লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি এবং বিশেষ পোষাক হয় পায়জামা ও পাঞ্জাবি।
পায়জামা, বাংলা এলাকার অবিবাহিত মেয়েদের পোষাক ছিলো এবং এখনো আছে, কিন্তু আরব মুসলমান পুরুষদের নিম্নাঙ্গের পোষাক পায়জামা হওয়ায়, বাংলা ধর্মান্তরিত মুসলমানরা পায়জামা পরতে শুরু করে, কিন্তু যেহেতু তারা বৌদ্ধ থেকে ধর্মান্তরিত মুসলমান, সেহেতু তারা প্রায় হাজার বছর ধরে পালন করা বৌদ্ধ কালচার, লুঙ্গি পরা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হতে পারে নি, তাই মুসলমানরা সাধারণভাবে সেলাই করা লুঙ্গি পরে, কিন্তু বিশেষ অনুষ্ঠানে তারা পায়জামা ও পাঞ্জাবি পরে, যে পাঞ্জাবি সম্পূর্ণভাবেই হিন্দুদের পোষাক।
ঐতিহাসিকভাবে, পাঞ্জাবি হিন্দুদের পোষাক হওয়ায়, যে সব মুসলমান প্রকৃত ইসলামকে জানে এবং তা অনুসরণ করতে চায়, তারা কখনো পাঞ্জাবি পরিধান করে না, পরিধান করে জোব্বা ও পায়জামা; একারণে কোনো মাদ্রাসার পোষাক পাঞ্জাবি নয়, যেসব মাদ্রাসায় পাঞ্জাবি পরা হয়, হয় তারা বিষয়টি সম্পর্কে জানে না বা পাঞ্জাবিকে জোব্বার সমগোত্রীয় পোষাক ব’লে মনে করে পরিধান করে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নয়।
এছাড়াও টয়লেট বাথরুমের মতো ঠেকা বেঠেকায় ঐসব গোঁড়া মুসলমানরা হয়তো লুঙ্গি ইউজ করে, কিন্তু বিশেষ অনুষ্ঠানে তারা কখনো পায়জামা ও জোব্বা ছাড়া অন্য কিছু প’রে না।
এই সব তথ্য ও ঘটনা থেকে এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, পাঞ্জাবি কোনো অবস্থাতেই ইসলামি পোষাক নয়, তাই মুসলমানদের জন্য পাঞ্জাবি পরা সম্পূর্ণ হারাম, যেমন হারাম তাদের জন্য ধুতি পরা; কারণ, হাদিসে স্পষ্ট করে বলা আছে যে,
“যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ে সাথে সামঞ্জস্য রাখলো, সে তাদের অন্তর্ভূক্ত হলো”- (আবু দাউদ, ৩৫১৪)
তার মানে মুসলমানরা তাদের দৈনন্দিন জীবন যাত্রায় কোনো ভাবেই অন্য কোনো জাতির কৃষ্টি কালচারকে অনুসরণ বা পালন করতে পারবে না, যদি তারা তা করে, তাহলে অবশ্যই তারা আর মুসলমান থাকবে না। এই সূত্রে যেসব মুসলমান পাঞ্জাবি পরে তারা যেমন মুসলমান নয় হিন্দু, তেমনি যারা শার্ট প্যা্ন্ট পরে তারাও মুসলমান নয় খ্রিষ্টান; কারণ, শার্ট-প্যান্ট-কোট-টাই খ্রিষ্টানদের পোষাক।
এখানে কেউ কেউ এই প্রশ্ন তুলতে পারে যে, কোট-টাই-শার্ট-প্যান্ট যদি খ্রিষ্টানদের পোষাক হয়, তাহলে হিন্দুরা কি সেই সব পোষাক পরে খ্রিষ্টান কালচারকে অনুসরণ করছে না ?
ঐতিহাসিকভাবে হিন্দুদের পোষাক ধুতি পাঞ্জাবি হলেও, ইসলামের মতো হিন্দু শাস্ত্রের কোথাও একথা বলা নেই যে, অন্য কোনো জাতির কালচারকে অনুসরণ করা যাবে না বা তাদের পোষাক পরা যাবে না, বরং বলা আছে,
“যস্মিন দেশ যদাচার”
অর্থাৎ যেমন দেশ, সেখানে তেমন আচার করতে হবে।
এর মাধ্যমে সভ্যতা যে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল এবং অঞ্চলভেদে মানুষের কৃষ্টি কালচারের যে ভিন্নতা, তাকে হিন্দু শাস্ত্রে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া যে লোক যে পোষাকই পড়ুক না কেনো, সে যদি মানুষের সাথে মুসলমানের মতো আচরণ না ক’রে, মানুষের মতো আচরণ করে, সে সনাতন মানব ধর্মই পালন করে, তাই পোষাক নিয়ে হিন্দুধর্মের কোনো মাথা ব্যথা নেই, মানুষের সাথে মানুষের মতো আচরণ ক’রে, যার যেমন খুশি, তেমন পোষাক পড়ুক, এটা হিন্দুশাস্ত্রের স্বাধীনতা।
পোষাক নিয়েই যখন কথা হচ্ছে, তখন মেয়েদের পোষাকই বা বাদ যাবে কেনো ?
এ্যারাবিয়ান মুসলিম নারীদের পোষাক হলো, ঘরে- ঘাগড়া জাতীয় আলখাল্লা, আর বাহিরে- বস্তাবন্দী মার্কা বোরকা, যাতে মেয়েদের দেহের কোনো অঙ্গের ভাঁজ, ঘরে বা বাইরে কোথাও দেখা না যায় এবং সেই ভাঁজ দেখে কোনো মুসলমান যেন কোনো নারীকে ধর্ষণ করতে বাধ্য না হয়। সেই সাথে মুসলমানরা যেহেতু মেয়েদের চুলকেও যৌনাঙ্গ মনে করে এবং খোলা চুল দেখলে তাদের ঈমান দণ্ড খাড়াইয়া যায়, সেহেতু মুসলিম নারীদের চুল ঢাকার পোষাক হলো হিজাব। কিন্তু বাঙ্গালি মুসলিম নারীরা হর হামেশায় শাড়ি পরে, যেটা সম্পূর্ণরূপে হিন্দুয়ানি পোষাক। কারণ, শাড়ি আরবের পোষাক নয়, সম্পূর্ণরূপে ভারতীয় তথা হিন্দু নারীর পোষাক। তাই যেসব মুসলিম মহিলা শাড়ি পরে বা শাড়ি পরে বিয়ে করে তারা যেন নিজেকে মুসলমান মনে না করে; কারণ, তারা হিন্দুয়ানি পোষাক পরায় হিন্দু।
সুতরাং মুসলমানরা ব্যাপকভাবে পাঞ্জাবি পরে ব’লে এবং হিন্দুরা সাধারণত পাঞ্জাবি পরে না ব’লে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, যখন কোনো হিন্দু স্বাভাবিক অবস্থায় সাধারণভাবে পাঞ্জাবি পরে, তখন সে ইসলামিক কালচার পালন করছে, এর বিপরীতে বরং এটাই সত্য যে, মুসলমান পুরুষরাই পাঞ্জাবি প’রে এবং মুসলিম মহিলারা শাড়ি প’রে হিন্দুয়ানি কালচার পালন করে যাচ্ছে।
সুতরাং দুর্গা পূজা সহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পাঞ্জাবি পরুন এবং গর্বের সাথে মনে করুন যে আপনি হিন্দু।
Like our FB Page
https://www.facebook.com/history990