অশ্বমেধ যজ্ঞ নিয়ে হিন্দু বিদ্বেষীদের অপপ্রচার | bengalhindus.blogspot.com
বিভিন্ন বৈদিক যজ্ঞের মধ্যে অশ্বমেধ যজ্ঞ অন্যতম যজ্ঞ। কিন্তু এই অশ্বমেধ যজ্ঞকে এই পর্যন্ত যে পরিমাণে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা অন্য কোনো উৎসব নিয়ে করা হয়েছে কি না সন্দেহের বিষয় ! মধ্যযুগীয় বিকৃত মস্তিষ্কের কিছু পণ্ডিত নামধারী লোকেরা বেদের অর্থের যতটা না বিকৃতি ঘটিয়েছে তার চেয়ে বেশী অর্থ বিকৃতি ঘটিয়েছে এই যজ্ঞ নিয়ে । তাই বর্তমানে অহিন্দু ও নাস্তিকদের নিকট এই যজ্ঞ অশ্ব হত্যা ও অশ্লীলতার এক আয়োজন নামে পরিচিত। দুঃখের বিষয় এ বিষয়ে সাধারণ হিন্দুরাও অবগত নয়। তাই এই সুযোগে চলে সাধারণ হিন্দুদের মগজ ধোলাই করে ধর্মান্তরকরণ ও নাস্তিক বানানোর কর্ম।
প্রণাম জানাই মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীকে, যিনি প্রথম বিভিন্ন শাস্ত্রীয় বচনের প্রমাণ দ্বারা মহীধর ও উব্বটের সেই বানানো বিকৃত অনুবাদের খণ্ডন করেছিলেন । উব্বট মহীধরের ভাষ্য অনুযায়ী অশ্বমেধ যজ্ঞে অশ্ব হত্যা করা হয় এবং পরবর্তীতে রাণী অশ্লীল কর্মে লিপ্ত হয় ।
আসুন দেখে নেই যজ্ঞ কি ?
~~~~~~~~~~~~~~~~
🟩বৈদিক সংস্কৃতের ধাতুপাঠ অনুযায়ী
যজ্ঞ শব্দের উৎপত্তি ‘যজ্’ ধাতু হতে, যার অর্থ-
১) দেব পূজা
২) সংগতিকরণ বা ঐক্যবদ্ধ করা
৩) দান করা
🟩মহর্ষি যাস্কাচার্য তাঁর অমরগ্রন্থ নিরুক্তে লিখেছেন-
অধ্বর ইতি যজ্ঞনাম ।
ধ্বর ইতি হিংসাকর্মা তৎপ্রতিনিষেধ ~ নিরুক্ত ২.৭
অর্থাৎ যজ্ঞের এক নাম অধ্বর । ধ্বর দ্বারা হিংসা কর্ম বোঝায় । অধ্বর শব্দ প্রয়োগে সেই হিংসা কর্ম নিষেধ করা হয়েছে । অর্থাৎ যজ্ঞে পশুবলি নিষিদ্ধ। চারবেদের অসংখ্য স্থানে যজ্ঞকে অধ্বর বলা হয়েছে ।
তাই আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি, যেসব ব্যক্তি বেদের যজ্ঞকে পশুবলির অনুষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করেছে তাদের সেই ব্যাখ্যা ভুল এবং বেদ বিরুদ্ধ ।
এবার দেখে নেই অশ্বমেধ যজ্ঞ কীঃ
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যজুর্বেদের ব্যাখ্যা ব্রাহ্মণ গ্রন্থ হচ্ছে শতপথ ব্রাহ্মণ।
শতপথের ১৩।২।২।১৪,১৫,১৭ এবং ১৯ এ বলা হয়েছেঃ
“প্রজাপতির্বৈ জমদগ্নিঃ সো অশ্বমেধঃ।
ক্ষত্রং বাশ্বো বিডিতরে পশবঃ। ক্ষত্রস্যৈতদ্রূপং য়দ্ধিরণ্যং।
জ্যোতির্বৈ হিরণ্যম্।”
অর্থাৎ রাজ্যপালনের কর্মই অশ্বমেধ। রাজার নাম অশ্ব এবং প্রজার নাম অশ্ব ব্যতীত অপরাপর পশুর নাম । অশ্বমেধে রাজ্যের শোভা স্বরূপ ধন হয়ে থাকে এবং সেই জ্যোতির নাম হিরণ্য ।
শতপথ ব্রাহ্মণের ১৩।১।৬ এ বলা হয়েছেঃ
“রাষ্ট্রং বা অশ্বমেধঃ। বীর্য়ং বা অশ্বঃ।”
অর্থাৎ অশ্ব শব্দ বল বাচক । যে কর্মে রাজ্যের প্রজাদের বল বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রের উন্নতি ঘটে তাই অশ্বমেধ ।
শতপথ ব্রাহ্মণে আরো বলা হয়েছে-
“রাষ্ট্রমশ্বমেধো জ্যোতিরেব তদ্রাষ্ট্রে দধাতি। ক্ষত্রায়ৈব তদ্বিশং কৃতানকরামনুবর্তমানং করোতি ।। অথো ক্ষত্রং বা অশ্বঃ ক্ষত্রস্যৈতদ্রূপং য়দ্ধিরণ্যং । ক্ষত্রমেব তৎ ক্ষত্রেণ সমর্ধয়তি । বিশমেব তদ্বিশা সমর্ধয়তি।।” -শতপথ ১৩।২।২।১৬,১৫,১৭,১৯
অর্থাৎ যা দ্বারা রাজ্যের প্রকাশ বা উন্নতি হয় তাই অশ্বমেধ । রাজ্যের উন্নতিবাচক কর্ম ধারণ করাই রাজ্যসভার কার্য । ঐ রাজ্যসভা নিজ পক্ষ থেকেই প্রজার প্রতি কর ধার্য করে থাকে । সেই রাজা দ্বারাই রাজ্য ও প্রজা দ্বারাই প্রজাদের বৃদ্ধি বা উন্নতি হয়ে থাকে ।
অর্থাৎ আমরা দেখতে পাচ্ছি অশ্বমেধ হচ্ছে সেই কর্ম যা দ্বারা দেশ ও জনগণের কল্যাণ হয়ে থাকে । এখানে অশ্লীলতার কোনো স্থান নেই । তাই বলতে পারি যারা এই মহৎ কর্মের বিকৃত অশ্লীল অর্থ করেছে সেসব অল্পবুদ্ধি ভাষ্যকারদের সেই ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ রূপে কল্পনা প্রসূত, যার কোনো শাস্ত্রীয় ভিত্তি নেই ।
অপপ্রচারকারী ভন্ডদের থেকে সতর্ক থাকুন।
🚩তথ্য গুলো ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আমাদের সাইটটি ফলো করুন ও শেয়ার করুন। আপনাদের অনুপ্রেরনাই আমাদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।