মাদক/নেশাজাত দ্রব্য সম্পর্কে সনাতন ধর্ম আমাদের কি নির্দেশ দিয়েছে?
আমরা জানি মাদক গ্রহণ বা মাদকাসক্তি অনৈতিক এবং অধর্মের পথ কারণ মাদকাসক্তি মাদক গ্রহণকারীর। স্বাভাবিক চেতনাকে বিমূঢ় করে দেয়। তিনি আর প্রকৃতিস্থ থাকেন না, সুস্থ থাকেন না। আর অসুস্থ দেহ ও মনে তিনি যে আচরণ করেন, তাতে অনৈতিকতা প্রকাশ পায়। ধূমপান, মদ, গাঁজা, আফিম,হেরােইন,কোডিন (ফেনসিডিল) ইত্যাদি মাদক। এগুলাে গ্রহণ করা একবার শুরু হলে তা নেশায় পরিণত হয় আর সহজে ছাড়া যায় না। মাদকাসক্ত মাদকদ্রব্য না পেলে অস্থির হয়ে ওঠেন। তার আচরণ কখনও কখনও হয়ে ওঠে ধ্বংসাত্মক।
ধূমপান ও মাদকাসক্তির কুফলঃ
ধূমপান ও মাদকাসক্তি দৈহিক, মানসিক, আর্থিক ও সামাজিক ক্ষতি সাধন করে। ধূমপানের ফলে নানাবিধ রােগ হয়। যেমন- নিউমােনিয়া, ব্রংকাইটিস,যক্ষ্মা,ফুসফুসের ক্যান্সার,গ্যাস্টিক আলসার, ক্ষুধামান্দ্য,হৃদরােগ ইত্যাদি। তা ছাড়া ধূমপান শুধু ধূমপায়ীরই ক্ষতি করে না,অন্যদেরও ক্ষতির কারণ হয়। মাদকগ্রহণেও নানা প্রকার অসুখ হয় এবং মাদকাসক্ত স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে দূরে সরে যান। মাদকগ্রহণে মানসিক ক্ষতি হয়। মাদকাসক্ত অবস্থায় বিবেকবুদ্ধি লােপ পায়। মাদকাসক্তের চৈতন্য পর্যন্ত লােপ পেতে পারে। মাদকাসক্ত ব্যক্তির মস্তিষ্কবিকৃতি পর্যন্ত ঘটতে পারে। মাদকদ্রব্য ক্রয় করার জন্য অর্থ যােগাড় করতে গিয়ে মাদকাসক্ত অসৎ উপায় অবলম্বন করতেও দ্বিধা করে না । মাদকাসক্তির কারণে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন পর্যন্ত শিথিল হয়ে যায় ।
আসুন দেখে নেই সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ "বেদ" এ নেশাদ্রব্য নিয়ে কি বলা হয়েছেঃ
নকী রেবন্তঃ সখ্যায়া বিন্দসে পীয়ন্তি তে সুরস্বঃ।
য়দা কুয়োসি নদানু সমূহস্যাদিত পিতেব হূয়সে।
~ঋগবেদ ৮.২১.১৪~
তোমার নেশাকারী সঙ্গী/বন্ধু যদি সবচেয়ে বিদ্বান বা ধনীও হয় তারপরও বজ্রপাততূল্য এবং অবশ্য পরিত্যজ্য।
“ হে মনুষ্য, ইন্দ্রিয় কে সংযত কর। একমাত্র চরিত্রহীন লোকেরাই নেশা, নারীর দিকে আকৃষ্ট হয়।“
~অথর্ববেদ ৭.৬০.১~
সুরা বৈ মলমন্নানাং পাপ্মা চ মলমুচ্যতে।
তস্মান ব্রাহ্মনরাজন্যো বৈশ্যশ্চ ন সুরাং পিবেত্।।
~মনুসংহিতা ১১.৯৪~
সুরা হল অন্নের মলস্বরুপ,পাপরুপ তাই ব্রাহ্মন,ক্ষত্রিয় নির্বিশেষে সকলের জন্যই অবশ্য বর্জনীয়।
হৃৎসু পীতাসো যুধ্যান্তে দুর্মদাসো ন সুরায়াম। উধর্ন নগ্না জরন্তে।।
(ঋগ্বেদ ৮/২/১২)
যাহার হৃদয় খুলিয়া মদ্যপান আদি নেশাদ্রব্য গ্রহন করে তাহার নিজেদের মধ্যে তথা সংসার এবং পরিবারের মধ্যে বহূ কহল বিবাদ তথা মারামারি ঝগড়া ইত্যাদি করিয়া থাকে। তাহারা যত্র তত্র উলঙ্গ হইয়া যাই তাহারের লজ্জাবোধ থাকেনা। তাহারা সর্বক্ষন প্রলপোক্তি তথা গালাগালি করিতে থাকে তাহারা নিশ্চই দুষ্টবুদ্ধি সম্পন্ন ব্যাক্তি তাহাদের পরিত্যাগ করা উচিৎ।
মাদকাসক্তি প্রতিরােধে পারিবারিক ধর্মীয় সংস্কৃতির গুরুত্বঃ
পরিবারই সমাজের প্রথম স্তর। পারিবারিক ধর্মীয় সংস্কৃতি ও নৈতিক মূল্যবােধ গােটা পরিবারের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে। পরিবারের সকল সদস্যকে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে হবে যে আমাদের দেহে আত্মারূপে ব্রহ্ম অবস্থান করছেন। সুতরাং এ দেহ ব্ৰহ্ম বা ঈশ্বরের মন্দির। তাকে কোনােভাবেই অপবিত্র করা চলবে না। দ্বিতীয়ত, হিন্দুধর্ম অনুসারে মাদকাসক্তি ঘােরতর পাপ সমূহের অন্যতম । কেবল মাদকাসক্তই পাপী নন, যাঁরা তাঁর সঙ্গ করেন, তাঁরাও পাপী। কারণ মাদকাসক্তের পাপ তাঁদেরও স্পর্শ করে । মাদকাসক্তকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনাও একটি পারিবারিক কর্তব্য। সন্তানদের গড়ে তােলা পিতা-মাতার ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব। তাই লক্ষ রাখা প্রয়ােজন সন্তানেরা কেমন করে তাদের দৈনন্দিন জীবনটা অতিবাহিত করছে । সন্তানদের কেবল শাসন নয়, সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে । উদ্বুদ্ধ করতে হবে ধর্মীয় সংস্কৃতি ও নৈতিক মূল্যবােধের আলােকে । আমরা ধর্মীয় কল্যাণ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মহত্তর সাধনায় লিপ্ত থাকব। পারিবারিক ধর্মীয় সংস্কৃতি ও নৈতিক মূল্যবােধের আলােকে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জীবন হবে পবিত্রতার আলােকে উদ্ভাসিত । তবে পারিবারিক শিক্ষা দিতে হবে কেবল শাসনের আকারে নয়, দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে বলা হয়েছে- 'আপনি আচরি ধর্ম জীবেরে শিখায়'। পারিবারিক ধর্মীয় সংস্কৃতি থেকে আমরা এমন শিক্ষা পেতে চাই, যা পরিবারের সকল সদস্যকে ধূমপান ও মাদকগ্রহণের মতাে অনৈতিক কাজ থেকে দূরে রাখে।
পরিবারের সবাই যেন অঙ্গীকার করে-
‘ধূমপান মাদকগ্রহণ অধর্মের পথ,
চালাব না সে পাপপথে আমার জীবনরথ।
আসুন আমরা সকলেই আমাদের ধর্মকে রক্ষা করি। সকল মানুষকে সচেতন করি। আসুন, এই বার্তাটি সকলের নিকট পৌছে দেই। আর হ্যা আপনারা যারা এমন আরো তথ্যপূর্ন লেখা আরো আগে আপডেট পেতে চান তাহলে আমাদের টেলিগ্রামে অবশ্যই যুক্ত হয়ে পাশে থাকুন।