Translate

লীলা রায় ১৯৪৬ সালে নোয়াখালী দাঙ্গায়, তিনি একাই ১৩০৭ জন হিন্দু মেয়েকে উদ্ধার করেন

নোয়াখালী দাঙ্গা নোয়াখালী রায়ট


(Riot)বা নোয়াখালী গনহত্যা বা নোয়াখালী হত্যাযজ্ঞ নামেও পরিচিত। এটি ছিল স্থানীয় মুসলিমদের দ্বারা সংঘটিত এক ধারাবাহিক হত্যাযজ্ঞ, হিন্দু নারী ধর্ষণ, নারী ও অল্প বয়স্ক মেয়েদের অপহরণ, হিন্দুদেরকে জোরপূর্বক মুসলিমকরন, হিন্দু সম্পদ লুট-ধ্বংস-অগ্নিসংযোগ। এটি ঘটেছিল ১৯৪৬ সালের অক্টোবর-নভেম্বর এ তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব বঙ্গে আর বর্তমানে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী জেলায়। এই হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয় ব্রিটিশদের কবল থেকে ভারতবর্ষের মুক্তির ঠিক এক বছর আগে। আক্রান্ত এলাকা ছিল প্রায় ২০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে। এই এলাকার মধ্যে রামগঞ্জ, বেগমগঞ্জ, রাইপুর, লক্ষীপুর, ছাগলনাইয়া, নোয়াখালী জেলার সন্দ্বীপ পুলিশ স্টেশন এবং হাজিগঞ্জ, ফরিদ্গঞ্জ, ত্রিপুরা জেলার চাঁদপুর, লাকসাম ও চৌদ্দগ্রাম পুলিশ স্টেশন এবং আরও অন্যান্য এলাকা।



(তৎকালীন নোয়াখালী ছিল বর্তমান বাংলাদেশের নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী নিয়ে এবং ত্রিপুরা জেলা ছিল কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে) এলাকার হিন্দুদের উপর এই ম্যাসাকার শুরু হয় ১০ অক্টোবর ১৯৪৬ সালে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার দিনে এবং সমান তীব্রতায় তা চলতে থাকে প্রায় চার সপ্তাহ ধরে।

হিসেব করে দেখা যায় প্রায় ৫০০০ এর উপর হিন্দু নরনারীকে হত্যা করা হয়, শত শত হিন্দু নারী, অল্প বয়স্ক মেয়েদের জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হয় এবং হাজার হাজার নারী পুরুষদের কে জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধরমান্তরিত করা হয়। সেখানে হিন্দু মহিলাদের মাটিতে চিৎ করে শুইয়ে মুসলিম লীগের গুণ্ডারা পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে সিঁথির সিঁদুর মুছে দিয়ে হাতের শাঁখা ভেঙ্গে তাদের স্বামী ও পুত্র ও শিশু কন্যাদের হত্যা করে ওই হিন্দু মহিলাদের জোর করে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করে লীগ গুণ্ডারা বিয়ে করত। প্রায় ৫০,০০০ থেকে ৭৫,০০০ বেঁচে থাকা হতভাগ্যকে কুমিল্লা, চাঁদপুর, আগরতলা ও অন্যান্য জায়গার অস্থায়ী আশ্রয় শিবির গুলোতে আশ্রয় দেয়া হয় দাঙ্গা কবলিত গ্রামের পর গ্রাম জুড়ে হিন্দুদেরকে জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার মত ঘৃণ্য পাশবিকতায় উন্মত্ত হয়ে ওঠে মুসলিমরা। 


হিন্দু পুরুষদেরকে মাথায় টুপি এবং মুখে দাঁড়ি রাখা বাধ্যতামুলক করা হয়। মুসলিমরা তাদের বাড়ি টহল দেয়া শুরু করে এবং গ্রামেরমৌলবিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ইসলামিক শিক্ষা নিতে বাধ্য করতে থাকে। হিন্দু পুরুষদেরকে মুসলিমরা জোর করে মসজিদে নিয়ে নামাজ পড়াত। হিন্দুদের কে জোর করে গরুর মাংস খেতে বাধ্য করা হয় কারণ হিন্দুধর্মানুসারে গরু তাদের কাছে পবিত্র প্রাণী বিধায় এর মাংস তারা খায় না । হিন্দু মেয়ে এবং মহিলাদের মুসলিমরা জোর করে বিয়ে করে। ধর্মান্তরিত হিন্দুদের আরবী নামে নতুন নামকরণ করা হয়। মুসলিম নেতারা উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের নামের টাইটেল যেমন চৌধুরী, ঠাকুর প্রভৃতি নামের শেষে যুক্ত করতে অনুমতি দেয়।

অশোকা গুপ্ত যার স্বামী চট্টগ্রামের একজন বিচারক ছিলেন। তিনি সেই সব মানুষদের মধ্যে একজন যারা সর্বপ্রথম নোয়াখালীতে দুর্গতদের সাহায্যের জন্য এসেছিলেন। তিনি একজন দুর্ভাগা মহিলার কথা জানতেন, যার স্বামী তাদের কাছে সাহায্যের জন্য এসেছিলেন। প্রতি রাতে গ্রামের মুসলিমরা ওই মহিলাকে ধরে নিয়ে যেত এবং ধর্ষণ করত। কিন্তু তারা গ্রাম থেকে পালাতেও পারত না। অশোকা গুপ্ত বলেন, তারা পুলিশ স্টেশনে গিয়ে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেন। কিন্তু ওই দুর্ভাগাদের সাহায্যের জন্য কেউ ছিল না। ধর্মান্তরিতদের চলাচল ছিল মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণাধীন। কখনও গ্রামের বাইরে যেতে হলে স্থানীয় মুসলিম নেতাদের অনুমতি নিতে হত। রামগঞ্জ পুলিশ স্টেশনের অন্তর্গত খালিশপাড়াতে মুসলিমরা ধর্মান্তরিত হিন্দুদের কাছ থেকে জোর করে লিখিত আদায় করে।


যখন এই পাশবিক হিন্দু নিধন আর নেক্কার জনক ধর্মান্তকরনের খবর বিভিন্ন সংবাদ পত্রে প্রকাশ হতে শুরু করে আশ্চর্যজনক ভাবে মুসলিম লীগ পরিচালিত সংবাদপত্র দি স্টার অফ ইণ্ডিয়া(The Star of India) জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণের ঘটনা অস্বীকার করে বসল। যদিও এসেম্বেলিতে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রশ্নের উত্তরে হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী বলেন শুধুমাত্র ত্রিপুরা জেলাতে ৯,৮৯৫ টি ধর্মান্তকরনের ঘটনা ঘটেছে। যদিও এটিত মূল সংখ্যার তুলনায় হয়ত খুবই নগন্য। নোয়াখালী তে কতগুলো ধর্মান্তকরনের ঘটনা ঘটেছে তার হিসাব হয়নি কিন্তু সহজে বোঝা যায় তার সংখ্যা হবে কয়েক হাজার। এডওয়ার্ড স্কিনার সিম্পসন তার রিপোর্টে কেবলমাত্র ত্রিপুরা জেলার তিনটি পুলিশ স্টেশন যথা ফরিদ্গঞ্জ, চাঁদপুর ও হাজিগঞ্জের অন্তর্ভুক্ত এলাকাতেই ২২,৫৫০ টি ধর্মান্তকরনের ঘটনা লিপিবদ্ধ করেন। ডঃ তাজ-উল- ইসলাম হাশমী মনে করেন, নোয়াখালী গণ হত্যায় যে পরিমান হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে তার কয়েকগুন বেশি হিন্দু মহিলাদের ধর্ষণ এবং ধর্মান্তকরন করা হয়েছে। এম.এ.খান এর মতে, নোয়াখালীর ৯৫ভাগ হিন্দুদেরই জোরপূর্বক ইসলামে ধর্মান্তকরন করেছিল মুসলিমরা। বিচারপতি জি.ডি. খোসলা মনে করেন, নোয়াখালীর সমগ্র হিন্দু জনগোষ্ঠীর সর্বস্ব লুট করে নেয়া হয়েছিল এবং তাদের কে জোরপূর্বক মুসলমান বানানো হয়েছিল।



কংগ্রেস সভাপতি আচার্য্য কৃপালনির স্ত্রী সুচেতা কৃপালনি নোয়াখালিতে নারী উদ্ধার করতে যান। দাঙ্গার খলনায়ক গোলাম সরোয়ার ফতোয়া দেয়, যে সুচেতাকে ধর্ষণ করতে পারবে তাকে বহু টাকা দেওয়া হবে এবং গাজী উপাধিতে ভূষিত করা হবে।

এমন আরো তথ্য জানতে Bengal Hindu এর সাথেই থাকুন। 

এছাড়া আমাদের অনুপ্রানিত করার জন্য দয়াকরে নিচের এই  "ads" এ একটি ক্লিক করে দিবেন।


Bengal Hindu Page এ লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

https://www.facebook.com/history990/


আমাদের ইউটিউব চ্যানেল

https://youtube.com/channel/UCMoLvpHs-gz03hINcTdhzFQ






Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url