কৃষ্ণকে জন্ম নেওয়ার সুযোগ কংস কেনো দিয়েছিলো
কৃষ্ণকে জন্ম নেওয়ার সুযোগ কংস কেনো দিয়েছিলো?
এই ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি গঠন করে প্রবীর ঘোষ নামের এক সেকুলার। ইন্টারমিডিয়েট বা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর প্রবীর ঘোষের একটি বিখ্যাত বই 'অলৌকিক নয় লৌকিক', এক নাস্তিকের মাধ্যমে প্রথম হাতে পাই, এই একটা বই পড়েই আমি প্রবীরের দারুন ভক্ত হয়ে যাই, তারপর প্রবীরের যত বই যেখানে যা পেয়েছি সব সংগ্রহ করে পড়েছি।
প্রবীর ঘোষ- সাধারণত তার বইগুলোতে আমাদের চারপাশে ঘটা বা কোনো ব্যক্তিবিশেষের দ্বারা ঘটানো তথাকথিত অলৌকিক ঘটনাগুলো কিভাবে ঘটানো হয়েছে, তার বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা দেয়। এই প্রবীর ঘোষ এবং তার সাঙ্গোপাঙ্গোরা এককথায় পাঁড় জিহাদীস্ট নাস্তিক, বলা বাহুল্য এই প্রবীর ঘোষের বই পড়তে পড়তে আমিও এক সময় নাস্তিকে পরিণত হয়েছিলাম।
পাঠ্য পুস্তকের ইতিহাস বলে- গজনীর সুলতান মাহমুদ ১৭ বার সোমনাথ মন্দির আক্রমন করে ধ্বংস করেছে, কিন্তু এটা বলে না যে সেই ১৭ বার আক্রমনে সুলতান মাহমুদ কত লক্ষ হিন্দুকে হত্যা করেছে, কত লক্ষ নারী ও শিশুকে দাস হিসেবে বন্দী করে নিয়ে গিয়ে গজনীতে বিক্রি করেছে, আর কত মন সোনা রূপা পিতলসহ অন্যান্য ধনরত্ন, সোমনাথ মন্দির থেকে লুট করে নিয়ে গেছে।
সোম মানে চাঁদ বা চন্দ্র, পৌরাণিক কাহিনী মতে চন্দ্র, প্রজাপতি দক্ষ দ্বারা- আস্তে আস্তে ক্ষয় হয়ে বিলুপ্ত হওয়ার অভিশাপে অভিশপ্ত হয়ে প্রভাস তীর্থ, অর্থাৎ যেখানে সোমনাথ মন্দির অবস্থিত, সেখানে এসে শিবের আরাধনা করতে থাকে, শিব তার আরাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে চন্দ্র বা সোমকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেন, এতে চন্দ্র সেখানেই একটি মন্দির বানিয়ে শিবলিঙ্গ স্থাপন করে। ফলে চন্দ্র বা সোমের রক্ষাকর্তা হিসেবে শিবের এই মন্দিরের নাম হয় সোমনাথ মন্দির। এই মন্দিরটি কত প্রাচীন তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়; এই মন্দিরের সাথে রাবন এবং কৃষ্ণের নামও জড়িয়ে আছে।
যা হোক, এই মন্দিরের প্রতি লোকজনের আকর্ষণ বাড়াতে এটির নির্মাণ বা পুণনির্মান কালের কোনো এক সময়,এতে একটি ঘটনা ঘটানো হয়েছিলো,শিবলিঙ্গটিকে এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছিলো যাতে এটি শুন্যে অবস্থান করতে থাকে,অর্থাৎ শিবলিঙ্গটি ভূমি থেকে খানিক উপরে শূন্যে অবস্থান করতো, সাধারণ লোকজনের কাছে এটি অলৌকিক ঘটনা বলে মনে হতো এবং মন্দিরের উন্নয়নের জন্য যেমন তারা অকাতরে মন্দিরে ধন সম্পদ দান করতো, তেমনি নিজেদের স্বর্ণ অলঙ্কার তারা মন্দিরে রেখে যেতো, প্রভু শিব, তাদের সেই ধনসম্পদকে রক্ষা করবে এই ভরসায়।
সোমনাথ মন্দিরে রক্ষিত এই সব ধন সম্পত্তির খবর যায় লুটেরা সুলতান মাহমুদের কাছে এবং তারপর সে একের পর এক ১৭ বার সোমনাথ মন্দিরে অভিযান চালায়।
এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে সোমনাথ মন্দিরের ঐ শিবলিঙ্গকে শুন্যে ভাসিয়ে রাখা হয়েছিলো?
একটু আগেই বলেছি, সোমনাথ মন্দির কত প্রাচীন, তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু সেই প্রাচীনকালেও ভারতের বিজ্ঞান কতদূর এগিয়েছিলো, তার নিদর্শন আছে এই সোমনাথ মন্দিরে শিবলিঙ্গ স্থাপনের মধ্যে।
সোমনাথ মন্দিরে যে শিবলিঙ্গটি স্থাপন করা হয়েছিলো, সেটি ছিলো ধাতব এবং তাকে প্রাকৃতিক চুম্বকের মাধ্যমে চতুর্দিক থেকে আকর্ষণ করে মাঝখানে শুন্যে স্থির রাখা হয়েছিলো। বর্তমান যুগেও পৃথিবীতে এমন কোনো নিদর্শন নেই, যাতে চুম্বকের এই সূক্ষ্ম ব্যালান্সের ব্যবহার আছে। বিজ্ঞানীরা বর্তমানে তড়িত চুম্বকের মাধ্যমে নানা ধরণের ইলেক্ট্রিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করেছে, কিন্তু প্রাকৃতিক চুম্বকের এরকম আশ্চর্য সূক্ষ্ম ব্যলান্সের ব্যবহার পৃথিবীর ইতিহাসে আর দ্বিতীয়টি নেই, এই দিক থেকেও সোমনাথ মন্দিরে শিবলিঙ্গ স্থাপন, শুধু সেই প্রাচীনকালেই নয়, বর্তমান যুগেও একটি অলৌকিক ব্যাপারই বটে।
যা হোক, সোমনাথ মন্দিরের শূন্যে ভাসা সেই শিবলিঙ্গকে নিয়ে দেশে বিদেশে একটি অলৌকিক মিথ গড়ে উঠেছিলো, যার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষিত হয় গজনী অর্থাৎ বর্তমান আফগানিস্তানের শাসক সুলতান মাহমুদের; ইসলামের আবির্ভাবের পর থেকে ভারতের প্রতি যত মুসলমান শাসকের নজর পড়েছে, তাদের সকলের একটাই উদ্দেশ্য ছিলো ভারতের হিন্দুদেরকে মুসলমান বানানো। সুলতান মাহমুদ ভেবেছিলো, সোমনাথ মন্দির ধ্বংস করে যদি শিবলিঙ্গের সেই অলৌকিতার বিশ্বাসকে ভেঙ্গে দেওয়া যায়, তাহলে ভারতের হিন্দুদেরকে সহজে মুসলমান বানানো যাবে, তাই সে প্রথমবার মন্দির আক্রমন করে তা ধ্বংস করে এবং পরবর্তীতে ধন সম্পদের লোভে বার বার সে আক্রমন পরিচালনা করে। শুধু সুলতান মাহমুদই নয়, আরো অনেক মুসলমান শাসক এই মন্দির আক্রমন করেছে এবং লুঠপাটের সাথে তা ধ্বংসও করেছে। শুধু সোমনাথ মন্দিরের উপর একটি প্রবন্ধ আমি খুব শীঘ্রই লিখবো, সেখানে আপনারা এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
যা হোক, শুন্যে ভাসা শিবলিঙ্গের অলৌকিকতার বিশ্বাসকে ভেঙ্গে ফেলায়, সেকুলার প্রবীর ঘোষ, তার এক বইয়ে সুলতান মাহমুদের প্রশংসা করে এরকম একটি কথা বলেছে- এটা ছিলো অন্ধ ধর্মবিশ্বাসী মানুষকে বিজ্ঞানের পথে আনার একটা প্রথম পদক্ষেপ।
আর এটাই হলো প্রবীর ঘোষকে আমার অপছন্দ করার প্রথম কারণ। যে ব্যক্তি ভারতের লক্ষ লক্ষ হিন্দুকে হত্যা করেছে, লক্ষ লক্ষ হিন্দু নারী শিশুকে দাস হিসেবে বন্দী করে নিয়ে গেছে, কোটি কোটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি লুট করে নিয়ে গেছে, এককথায় যার হাতে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা, ভারতীয় হিন্দু সভ্যতা বিপন্ন হয়েছে, তার প্রশংসা করেছে যে কুকুর, তাকে আমি কিছুতেই আমার পছন্দের তালিকায় রাখতে পারি না; এজন্যই আমি ঘৃণা করি প্রবীর ঘোষকে এবং তার সংগঠন ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতিকে।
এবার নজর দিই কৃষ্ণের জন্মের ইতিহাসের দিকে-
দেবকী ও বসুদেবের বিয়ের পর দৈববাণী হয় যে, দেবকীর গর্ভের অষ্টম সন্তানের হাতে কংসের মুত্যু হবে। এটা শুনে সাথে সাথেই কংস, দেবকীকে হত্যা করতে উদ্যত হয়। কিন্তু তখন দেবকীর প্রাণ বাঁচানোর জন্য বসুদেব বলে, আমাদেরকে কারাগারে বন্দী করে রাখো, আমাদের যে সব সন্তান হবে, সবগুলোকে তোমার হাতে তাদের জন্মের পর পরই তুলে দেবো। আমার এই পরামর্শ না মেনে তুমি যদি দেবকীকে হত্যা করো, তাহলে আমাদের সকল মিত্র রাজা মথুরা আক্রমন করে তোমাকে হত্যা করবে, কিন্তু যদি আমার পরামর্শ মানো, আমি কথা দিচ্ছি কেউ তোমাকে বা তোমার রাজ্যকে আক্রমন করবে না।
কংস বিষয়টি যুক্তিযুক্ত বলে মেনে নেয় এবং দেবকী ও বসুদেবকে এক সাথে কারাগারে বন্দী করে রাখে।
এখানে প্রশ্ন হলো- কংস, দেবকী ও বসুদেবকে কেনো এক ঘরে এক সাথে বন্দী করে রাখলো ?
এখানেই কাজ করেছে মানুষের চরিত্রের একটি সূক্ষ্ম মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার।
কংস ছিলো একজন বীর যোদ্ধা, সে কিভাবে একটি শিশুর ভয়ে ভীত হয়ে তার জন্মকে রোহিত করবে ? তাহলে তো সবাই বলবে- কংস একজন ভীরু কাপুরুষ, যে একটি শিশুর ভয়ে দেবকী ও বসুদেবকে আলাদা ঘরে বন্দী করে রেখেছে, এমন ভীরু কাপুরুষ কিভাবে রাজার পদে থাকতে পারে ? তার তো রাজা হওয়ার যোগ্যতাই নেই । কেননা, এমন ভীরু কাপুরুষ কোন রাজা তো বহিশত্রুর হাত থেকে নিজের রাজ্য এবং প্রজাদেরকে রক্ষা করতে পারে না বা পারবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি।
এসব কারণে, প্রজারা যাতে কংসকে ভীরু ও কাপুরুষ বিবেচনা না করে, সে কারণে কংস একটি চ্যালেঞ্জ নেয়, সে দেবকী ও বসুদেবকে এক ঘরে বন্দী করে রাখে এবং তাদের সন্তান জন্মানোর সুযোগ তৈরি করে দেয়; এজন্যই যে, দেবকীর একেকটা সন্তানকে জন্মানোর সাথে সাথেই সে হত্যা করে এটা প্রমাণ করবে যে, কংস দেবকীর কোনো সন্তানের ভয়ে ভীত নয় বা কাউকে সে ভয় পায় না। এভাবে কংসের উদ্দেশ্য হলো দেবকীর সকল সন্তানকে হত্যা করে নিজেকে বীর পুরুষ হিসেবে প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত করা।
প্রকৃত বীর পুরুষদের চরিত্র এমনই হয়, তারা সকল চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করে।
আশা করছি, হিন্দুধর্ম সম্পর্কে এই খচ্চরের কটূক্তির জবাব, আমার বন্ধুদের মুখে তুলে দিতে পেরেছি।
উপরে যা লিখেছি, তার সব ঐ খচ্চরের স্ট্যাটাস প্রসঙ্গে; এবার নিচে যে যা লিখছি, সেটা কৃষ্ণের জন্ম প্রসঙ্গে একটি বাড়তি তথ্য আমার পাঠক বন্ধুদেরকে জানানোর উদ্দেশ্যে।
আপনারা জানেন যে, দৈববাণী হয়েছিলো- কংসের বধ হবে দেবকীর অষ্টম পুত্রের দ্বারা। কিন্তু অষ্টম পুত্র কেনো ? দেবকীর প্রথম বা দ্বিতীয় সন্তানের দ্বারা যদি কংসের বধ হতো, তাহলে সমস্যা কী ছিলো ? এমন হলে তো দেবকী ও বসুদেবকে ছয়টি সদ্যজাত সন্তানের মৃত্যুর শোক সইতে হতো না।
একটি গ্রীক প্রবাদ হলো-"যে ডাক্তারের জ্যোতিষ শাস্ত্রে জ্ঞান নেই, সে কোনো ডাক্তারই নয়"। কিন্তু আমি মনে করি শুধু ডাক্তারি জ্ঞানই নয়, জ্যোতিষ শাস্ত্রের জ্ঞান ছাড়া সকল জ্ঞানই অপূর্ণ। জ্যোতিষ শাস্ত্রের জ্ঞান ছাড়া পি.এইচ.ডি ডিগ্রীধারী বাংলার কোনো অধ্যাপকও যেমন বলতে পারবে না যে 'একাদশী বৃহস্পতি' বাগধারার প্রকৃত অর্থ কী ? তেমনি ভাগবত সম্পূর্ণ মুখস্থ করে ফেললেও কোনো ধর্মগুরুর ক্ষমতা নেই, জ্যোতিষের জ্ঞান ছাড়া বলা যে, কেনো দেবকীর অষ্টম পুত্রের হাতেই কংসের মৃত্যু হয়েছিলো, কেনো অন্য কোনো পুত্রের হাতে নয় ?
জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে, আমাদের সৌরজগতের গ্রহ নক্ষত্রগুলো, আমাদের ভাগ্য তথা কর্ম ও জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই প্রত্যেকটি গ্রহের সংখ্যাজ্ঞাপক একটি করে মান রয়েছে, যে সংখ্যাগুলো জানান দেয় ঐ গ্রহের চরিত্র বা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে। জ্যোতিষ মতে, সূর্যের সাংখ্যিক মান ১, চন্দ্রের ২, বৃহস্পতির ৩, ইউরেনাসের ৪, বুধের ৫, শুক্রের ৬, নেপচুনের ৭, শনির ৮ এবং প্লুটো ও মঙ্গলের ৯। যেহেতু পৃথিবীতেই মানুষ বাস করে, সেহেতু পৃথিবী কমন বলে পৃথিবী গ্রহ হলেও তার কোনো মান ধরার প্রয়োজন হয় নি, তাই জ্যোতিষ শাস্ত্রে পৃথিবীর কোনো সাংখ্যিক মান নেই।
শনি ছাড়া অন্য গ্রহগুলোর প্রভাব মানুষের উপর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শুভ, তাই সেগুলোর প্রভাবে মানুষের জীবনের তেমন কোনো তারতম্য ঘটে না, যা ঘটে সেটা খুবই সূক্ষ্ম, সেগুলো বোঝার জন্য জ্যোতিষের জ্ঞান অপরিহার্য এবং জ্যোতিষীরাই একমাত্র সেগুলো উপলব্ধি করতে সক্ষম। কিন্তু শনির প্রভাবে মানুষের জীবন তছনছ হয়ে যায়, তাই শনির প্রভাব যে কেবল ঐ নির্দিষ্ট ব্যক্তিই বুঝতে পারে, তা ই নয়; তার জীবনে এমন সব ঘটনা ঘটে যে, তার পরিচিত বলয়ের সবাই সেগুলো টের পায়।
এই শনির সংখ্যা হলো ৮, তাই আট যুক্ত যে কোনো কিছু, ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলে এবং সেই প্রভাব সব ক্ষেত্রেই ধ্বংসাত্মক বা নেগেটিভ। যাদের জন্ম ১৯৮৫/৮০ এর আগে তাদের হয়তো মনে আছে যে ২০০১ সালে বি.এন.পি জামাত নির্বাচনে জিতে বাংলাদেশে কী ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করেছিলো। খুন, ধর্ষণ, লুঠপাট, দখল অগ্নিসংযোগসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যে, তারা তা সেই সময় সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় করে নি। ভূমিধ্বস বিজয় উদযাপনের জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় সেই সময় জামাত বিএনপির লোকেরা দল বেঁধে আওয়ামী লীগ সমর্থক বিশেষ করে হিন্দু মেয়েদেরকে ধর্ষণ করতে যেতো বা দল বেঁধে ধর্ষণ করতো, এমন একটি ঘটনার শিকার হয়েছিলো সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার পূর্ণিমা শীল নামের একটি মেয়ে। সেই সময় এই দলবদ্ধ ধর্ষণ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য মেয়েরা বাড়ি ছেড়ে অন্য এলাকায় গিয়ে লুকিয়ে থাকতো; যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিলো দেশ, সেই নির্বাচন ছিলো বাংলাদেশের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, এখন ৮ সংখ্যার কার্যকারিতার সাথে আমার কথার হিসাব মেলান।
বিজ্ঞানীরা তো পদার্থ নিয়ে কাজ করে, তাদের হাতে তো কোনো বস্তু থাকে, তারা সেটা নিয়ে গবেষণা করে তারপর সে সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করে। কিন্তু আমাদের মুনি ঋষিদের জ্ঞানের কথা একবার চিন্তা করুন, জ্যোতিষ শাস্ত্রের মাধ্যমে তারা এমন কিছু বিষয়ে কথা বলে গেছে, যেগুলো না যায় ধরা, না যায় ছোঁয়া। অথচ সেগুলো মানব জীবনে একেবারে বাস্তব এবং কার্যকর। আমাদের মুনি ঋষিদের জ্ঞানের সীমাটাকে একবার উপলব্ধি করুন, আপনার মাথায় কিছু যদি ঘিলু থাকে, আপনার মাথা নত হতে বাধ্য।
যা হোক, শনির কারণে ৮ সংখ্যা যে যেকোনো কিছুতে বিপর্যয় নিয়ে আসে, সেটা উপরের উদাহরণে সম্ভবত বোঝাতে পেরেছি; দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তানের মাধ্যমে কংসের জীবনে বিপর্যয় আনা, কৃষ্ণকে অষ্টম পুত্র হিসেবে প্রকৃতির জন্ম দেওয়ার একটি কারণ। এককথায়, কৃষ্ণ ছিলেন কংসের জন্য শনি, তাই কৃষ্ণের হাতে কংস শেষ হয়ে গেছে। শুধু কংসের জন্যই নয়, কৃষ্ণ ছিলেন সমস্ত অধর্মীদের জন্য শনি, তাই সমস্ত অধর্মীদের বিনাশ করার জন্য কৃষ্ণ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ঘটান এবং দুষ্কৃতকারীদেরকে বিনাশ করে ধর্মপ্রতিষ্ঠা করেন।
অষ্টম পুত্র হিসেবে কৃষ্ণের জন্ম নেওয়ার অন্য কারণ হলো- সময় নিয়ে বহু বছর ধরে কংসের অত্যাচারকে সমাজ ও রাষ্ট্রের সামনে তুলে ধরে তার বিনাশ যে অপরিহার্য তার ন্যা্য্যতা প্রতিপন্ন করা।
কংস শুরু থেকেই অত্যাচারী ছিলো, তাই সে তার পিতা উগ্রসেনকে সিংহাসনচ্যুত করে বন্দী করে রেখেছিলো। যে লোক এমন কাজ করতে পারে, সে যে রাজ্যে প্রজাদের উপর আরো কত কী অত্যাচার করেছিলো, সেটা তো সহজেই অনুমেয়। তাই কংসকে বিনাশ করার নীল নকশা দেবতারা করে ফেলে এবং দেবকী-বসুদেবের বিয়ের পর, কংসের জন্য সা্বধান বাণী হিসেবে ঐ দৈববাণী প্রকাশ করে।
দেবকীর বিয়ে থেকে অষ্টম পুত্রের জন্ম পর্যন্ত কমবেশি ৮/১০ বছর সময় লেগেছে, এই সময়ে কংস তার অত্যাচারী রূপ থেকে সরে এসে দেবতাদের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করতে পারতো, যেটা কংস করে নি। উল্টো সে তার অপরাধের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে দেবকীর ছয় ছয়টি সন্তানকে দেয়ালের সাথে আছাড় দিয়ে হত্যা করেছে, এর ফলে কংসের অত্যাচারের ভয়াবহ রূপ সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে সন্দেহাতীতভাবে নিরূপিত বা প্রমাণিত হয়েছে, যার কারণে কৃষ্ণের হাতে কংসের বিনাশ ন্যায্যতা প্রাপ্ত হয়েছে।
মূলত এই দুটি কারণেই কংস বধ, দেবকীর প্রথম বা দ্বিতীয় পুত্রের দ্বারা না হয়ে অষ্টম পুত্রের দ্বারা হয়েছে।
আশা করছি, কৃষ্ণের জন্ম কেনো অষ্টম পুত্র হিসেবে, সেই বিষয়টি আমার পাঠক বন্ধুদেরকে বোঝাতে পেরেছি।
লেখকঃ রূপক
![]() |
ADS |