বাঙালীর সর্ববৃহৎ উৎসব কি দূর্গাপূজা নাকি ঈদ | Is Durga Puja or Eid the biggest festival of Bengalis?
আমাদের ছোটোবেলায় এর উত্তর ছিল "দুর্গাপুজো"। এখন উত্তর "দুর্গাপুজো ও ঈদ"। কয়েক বছর পরে উত্তর হবে "ঈদ ও দুর্গাপুজো"। তার কিছু বছর পরে উত্তর হবে "ঈদ"।
প্রাইমারি ইশকুলে রবি ঠাকুরের পদ্য পড়েছিলেন তো? রোমন্থন করুন ....
স্টিমার আসিছে ঘাটে, প’ড়ে আসে বেলা -
পূজার ছুটির দল, লোকজন মেলা
এলো দূর দেশ হতে; বৎসরের পরে
ফিরে আসে যে-যাহার আপনার ঘরে।
জাহাজের ছাদে ভীড়; নানা লোকে নানা
মাদুরে কম্বলে লেপে পেতেচে বিছানা
ঠেসাঠেসি ক’রে।......
পুজোর ছুটি উপলক্ষ্যে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ঘরে ফিরে আসছে। স্টিমারে আর তিল ধারনের জায়গা নেই। অধিকাংশেরই এটা বাৎসরিক ঘরে ফেরা। এটুকু সহজেই বোঝা যায়। একটা জিনিস খেয়াল করলেন কি, যে, সবাই ফিরছে দূরপাল্লার স্টিমারে? অর্থাৎ নদীপথে। চোখ বন্ধ করে বলা যায় এটি রবীন্দ্রনাথের যুগের পূর্ববঙ্গ, অর্থাৎ অধুনা বাংলাদেশের চিত্র। তখন দুর্গাপুজো-লক্ষীপুজো-কালীপুজো উপলক্ষ্যে "বাঙালীরা" এভাবেই কর্মস্থল থেকে বাড়ী ফিরত। একটা উৎসবের মেজাজ ছিল। বাঙালীর সবথেকে বড় উৎসব তখন ছিল দুর্গাপুজো।
দিন বদলাল।
ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ হল। চোদ্দ পুরুষের ভিটে ছেড়ে হিন্দুরা পিলপিল করে চলে এল ভারতে। '৪৭ এর দেশভাগের পরেও ৩০% (আন্দাজ) হিন্দু ছিল ওদেশে। কিন্তু বিষবৃক্ষ বড় হতে লাগল। আরো শ্বাপদসঙ্কুল হল সোনার বাংলা। মরুঝড়ে পঞ্চবটির ডালপালা ভাঙল, বিদ্ধস্ত হল তপোবন। আজ হিন্দু সম্ভবত ৮% । রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহ, জীবনানন্দের রূপসী বাংলা শুধু পুস্তকেই সীমাবদ্ধ হল। বাঙালী সংস্কৃতি ধ্বংসের মুখে পড়ল। "পুজোর ছুটি" কথাটা লোকে ভুলেই গেল। পাকিস্তান আমলেও সম্ভবত দিন পাঁচেকের ছুটি মিলত। এখন হিন্দু দরদী শেখ হাসিনার কৃপায় সেটুকুও পাওয়া যায় না।
দুর্গাপুজো বাঙালীর সবথেকে বড় উৎসব ছিল, এখন আর নেই। এখন সবথেকে বড় উৎসব সত্তর (প্রায়) দিনের ব্যবধানে বছরে দুটো ঈদ।প্রথমটি তবু একরকম, দ্বিতীয়টি তো পশু উৎসর্গ উপলক্ষ্যে পালিত হয়। আর প্রকৃতি যদি বর্ষামুখর হয়, তাহলে রাজপথ থেকে অলিগলি বয়ে চলে রক্তগঙ্গা। স্টিমার আজও ঘাটে আসে। রেলপথের কিছুটা উন্নতি হওয়াতে সেটাও আসে। অপরিমিত জনসংখ্যার ভারে জর্জরিত দেশ। মই লাগিয়ে ছাদে ওঠে পুরো সংসার। বাংলাদেশের ঈদের ট্রেন পৃথিবীর মধ্যে একটা দর্শনীয় জিনিস। বৎসরের পরে আজও লোকে ঘরে ফেরে। আগে ফিরত মণিলাল মন্ডল, এখন ফেরে মনিরুল মন্ডল।
ভবিষ্যতকে দেখুন চোখের সামনে। আজকের বাংলাদেশ আগামীর পশ্চিমবঙ্গের প্রতিচ্ছবি।