কেনো হিন্দুদের ফাসানো হচ্ছে?এর পেছনে কারা কাজ করছে - Bengal Hindus
নড়াইলের মির্জাপুর ডিগ্রী কলেজে নোয়াম চমেস্কিকে নিমন্ত্রন করে এনে একদিন তার কাছ থেকে ‘মুসলিমফোবিয়া’ বিষয়ে একটি ভাষণ শোনার আয়োজন করতে পারেন। সেমিনারের ব্যানার হিসেবে এই ছবিটি মঞ্চে রাখতে পারেন। এই কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার তার ‘মুসলিমফোবিয়ার’ কারণে একই কলেজের ছাত্র আরেক ‘মুসলিমফোবিক’ রাহুলকে সাপোর্ট করেছিলো বিধায় দেড় হাজার বছর ধরে ‘মুসলিমফোবিয়ার স্বীকার তৌহদী জনতা কলেজ অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরিয়ে ঘুরিয়েছে।
পুলিশের সামনে তাদের নিরাপত্তায় শান্তিপূর্ণভাবে মুসলিমফোবিয়ার শিকার নিপীড়িত তৌহদী জনতা স্বপন কুমারকে জুতা মালা পরানোকে হেগেল মার্কস চমেস্কি দিয়ে প্রমাণ করা যেতে পারে প্রলেতারিয়েতদের বিপ্লবের সময় একটু আধটু এরকম ঘটতেই পারে! কারণ নবীর উম্মতরা ব্রিটিশ কলোনি যুগে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদের কোলাবারেটর ব্রাহ্মণ্যবাদীদের হাতে যে নিপীড়িনের শিকার হয়েছিলো এটা হচ্ছে সেই অভিমানের বহির্প্রকাশ! বক্তব্য শেষে বলতে হবে, পৃথিবীতে কেবলমাত্র মুসলিমফোবিয়াই আছে। কোথাও মুসলিমদের হাতে অন্য জাতি সম্প্রদায় কোনদিন ফোবিয়ার শিকার হয়নি।
আমি ফেইসবুকে দেখেছি হিন্দু নামের আইডিগুলিতে নিজের অবস্থান পরিস্কার করতে তারা স্বঘোষিতভাবে বলছেন, এই আইডি থেকে কোন রকম ইসলাম ও নবী বিষয়ে কোন কটুক্তি করার বিপক্ষে। কোথায় এরকম কোন ফেইক আইডি থেকে পোস্ট দেখলে সেটা আমার নয় বলে বিবেচিত হবে। বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় ফেইসবুকে ভীত হচ্ছে নবী ও ইসলাম অবমাননায় ফেঁসে যাওয়ার। এই ভীতিটাকেই পশ্চিমা বামরা নাম দিয়েছে ‘মুসলিমফোবিয়া’! ভারতের হিন্দু বামরা বলছে এটা ‘হিন্দুদের মুসলমান ও ইসলাম সম্পর্কে অহেতুক ভীতি’! অথচ বাংলাদেশের লিবারাল মুসলিম বাবা-মা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হিজাবীনী হুজুরনী আর দাড়ি টুপিঅলা হুজুরদের কারণে। স্কুলের প্রশ্নপত্রে ‘শালিন পোশাক না পরলে ঈভ টিজিংয়ের শিকার হতে হয়’ এমন সৃজনশীল প্রশ্ন থেকে লিবারাল মুসলিম অভিভাবকরা ভীত তাদের সন্তানদের জন্য। তাহলে ‘মুসলিমফোবিয়া’ কি সোনার পাথরবাটি?
নূপুর শর্মাকে সমর্থন করে পোস্ট দিলে কেন তাকে গ্রেফতার করতে হবে? ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সমর্থন করে কমেন্টে করে কুমিল্লায় হিন্দু পাড়া পুড়িয়ে দিয়েছিলো তৌহদী জনতা। সেই গুন্ডামী জঙ্গিপণার বিচার কেউ করেনি। নড়াইলের মির্জাপুরের কলেজের চালানো তান্ডবের বিচার যে হবে না সেটি এই ছবিটি থেকে স্পষ্টতর। পুলিশের হেফাজতে কলেজের অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরিয়ে ঘুরাতে যারা পারে তারা আইন আদালতের উর্ধে! উকিল বিচারক সবারই অনুভূতি টনটনে! বেশির ভাগ ইসলাম অবমানার মামলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন জামিন পান না বিচারকের অনুভূতি স্পর্শকাতর বলে! পুলিশ এসব মামলায় আসামী ধরতে কারেন্টের মত তত্পর হয়ে উঠে। উকিলদের জান্নাতের যাবার এটাও একটা পেশাগত সুযোগ। এরকম অনূভূতির মামলায় কথিত আসামীর উকিল পাওয়াটাই কঠিন হয়ে উঠে। হুমায়ুন আজাদের আক্ষেপের “বাংলাস্থান” এখন প্রায় প্রতিষ্ঠিত। দেখতে দেখতে একটা দেশে পাকিস্তান হয়ে গেলো, দেশের অমুসলিম জাতি সম্প্রদায় মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতির ভয়ে ভীত হয়ে থাকে তবু জাতিসংঘে বিল পাশ হয় ‘মুসলিমফোবিয়া’!
পৃথিবীতে হিন্দু খ্রিস্টান বৌদ্ধ ইহুদী কারোর গান বাদ্যে সমস্যা সেই। এসব দেখে কারোর অনুভূতি আহত হয় না। পার্লার, বার, ডিস্কো, ছোট পোশাক, লিভ টুগেদার, সমকামিতায় কারোর কোন সমস্যা নেই সমস্যা কেবল মুসলমানদের! হালাল মাংস, হালাল শপ, শালিন পোশাক এগুলি নিয়ে পৃথিবীতে যারা অশান্তি সৃষ্টি করে তাদের ভয় পাওয়া বা আপদ মনে করাটা কেন অহেতুক হবে?
নূপুর শর্মা কিভাবে নবীকে নিয়ে কটুক্তি করেছে সেটিরও জবাব দিতে হবে। কেন নূপুর শর্মাকে সমর্থন করা যাবে না? কেন যীশু কৃষ্ণ মোজেসকে নিয়ে হাস্যরস কটুক্তি চলতে পারলে মুহাম্মদকে নিয়ে করা যাবে না?
কিন্তু আমরা কেবল এক পক্ষের কাছ থেকেই শুনতে পারি পশ্চিমারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে অহেতুক ভীতি ছড়াচ্ছে। ভারতের হিন্দুরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে অহেতুক ভীতি ছড়াচ্ছে। জাতিসংঘে ইমরান-এরদোয়ান জুটি ‘মুসলিমফোবিয়ার’ অভিযোগ তুলেছিলো অমুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে। কেউ প্রতিবাদ করেনি। জাপান কোরিয়া এই দেশগুলিতে বৌদ্ধরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও তারা সেক্যুলার ধর্মহীন জাতি। তাই ধর্ম পরিচয় ধরে তারা রাজনীতি করে না। নইলে তারা বলতে পারত ভগবান বুদ্ধ এই মুসলিমদের হাতে আফগানিস্থানে, বাংলাদেশের রামুতে চরম অপমানিত হলেও একটি মুসলমানও কোন বৌদ্ধ অধ্যুষিত দেশে সামান্য কটু কথা পর্যন্ত শুনেনি। একদিনে একটি গির্জাতে হামলা চালিয়ে চারশো খ্রিস্টানদের হত্যা করা হয়েছিলো শ্রীলংকায়। নাইজেরিয়ায় কয়েকশ খ্রিস্টান স্কুল ছাত্রীদেরকে গণিমতের মাল হিসেবে উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো বোকো হারাম গ্রুপ। এসব ঘটনার কোনগুলিকেই আন্তর্জাতিক নেতারা ‘মুসলিম’ শব্দ যুক্ত করে অভিযুক্তদের পরিচয় দেয়নি। কিন্তু ভারতের ‘হিন্দুরা’ বাবরী মসজিদ ভেঙ্গেছে এটা গোটা বিশ্বে উচ্চারণ করতে কোন বাঁধা নেই!
এর জবাব উটের বদলে পাটকেল দিয়ে দিতে হবে। যেমন বুনো ওল তেমন বাঘা তেঁতুল! যে পীরসাপকে নিয়ে এতকিছু, তার ইজ্জত মুবারক নিয়ে এক অশান্তি, তার ইজ্জত মুবারক ব্যালেন্ডার ফেলে ঘুঁটে ফালুদা করে দেওয়াই অনুভূতির একমাত্র চিকিত্সা!