বিক্রমাসিংহ প্রেসিডেন্ট হলে ফের অস্থির হতে পারে শ্রীলঙ্কা - Sojasapta2
স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে মারাত্মক অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সংকটে পড়া দেশকে টেনে তুলতে পারবেন এমন প্রত্যাশায় বুধবার তিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মধ্যে একজনকে বেছে নেবে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট।
![]() |
As Sri Lanka’s ruling Rajapaksas flee, Pandora Papers reveal ties to UAE properties |
কিন্তু প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর অন্যতম ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে জয়ী হলে ক্ষমতাসীন অভিজাতদের প্রতি ক্ষিপ্ত জনতা ফের বিক্ষোভ শুরু করতে পারে, এমন আশঙ্কা বিরাজ করছে। ক্ষমতাচ্যুত রাজাপাকসে পরিবারের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় অনেক সাধারণ শ্রীলঙ্কান বিক্রমাসিংহের বিরোধিতা করে আসছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ক্ষমতাসীন দল শ্রীলঙ্কা পোদুজানা পেরামুনার (এসএলপিপি) আইনপ্রণেতা, সাবেক সাংবাদিক দুল্লাস আলাহাপেরুমা বিরোধীদল ও বিক্ষোভকারীদের কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য প্রার্থী; কিন্তু আমদানি করার মতো কোনো বিদেশি মুদ্রা ছাড়া এবং আইএমএফের একটি বেইলআউট প্যাকেজের জন্য অধীরভাবে অপেক্ষায় থাকা একটি দেশের শীর্ষ পর্যায়ের শাসনের কোনো অভিজ্ঞতা তার নেই। তৃতীয় যে প্রার্থী, বামপন্থি জনথা ভিমুক্তি পেরামুনা দলের নেতা অনুরা কুমারা দিশানায়েকার অধীনে পার্লামেন্টের মাত্র তিনটি আসন আছে এবং তার জয়ী হওয়ার বাস্তব কোনো সম্ভাবনা নেই।
গত সপ্তাহে বিক্ষোভকারীরা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের সরকারি বাসভবন ও দপ্তর দখল করে নেওয়ার পর তিনি পালিয়ে প্রথমে প্রতিবেশী মালদ্বীপ ও পরে সিঙ্গাপুর চলে যান এবং পরে পদত্যাগ করেন। ওই সময় ছয়বারের প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহে দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান। বিক্ষোভকারীরা বিক্রমাসিংহের ব্যক্তিগত বাসভবন ও তার দপ্তরও তছনছ করে, কিন্তু তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ব্যর্থ হয়। চলতি সপ্তাহে বিক্রমাসিংহে বলেছেন, মে-তে যখন তিনি বর্তমান সরকারে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন ততদিনে অর্থনীতির পতন হয়ে গেছে।
অর্থনীতির এই ধসের জন্য শ্রীলঙ্কানরা রাজাপাকসে পরিবারকে দায়ী করেছে। এপ্রিল পর্যন্ত এই পরিবারের সাত জন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। তাদের কর হ্রাস ও রাসায়নিক সার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই কোভিড-১৯ মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত ঋণ-জর্জর অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয়।
শ্রীলঙ্কার ২২৫ আসনের পার্লামেন্টে রাজাপাকসেদের মিত্র হিসেবে বিবেচিত বিক্রমাসিংহের (৭৩) এবং তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আলাহাপেরুমার (৬৩) মধ্যে কারপক্ষে কতোটা সমর্থন আছে তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার হয়নি। পার্লামেন্টে বিক্রমাসিংহের দলের মাত্র একটি আসন থাকলেও গোটাবায়া রাজাপাকসের ভাই বাসিল রাজাপাকসেসহ ক্ষমতাসীন এসএলপিপি দলের একটি অংশের সমর্থন পাবেন। পার্লামেন্টে এই দলের মোট ১৪৫টি আসন আছে। কিন্তু তাতে ভাগ বসাবেন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী আলাহাপেরুমা, তিন এই দলেরই এমপি এবং দলের আরেকটি অংশ তার পক্ষে আছে; পাশাপাশি প্রধান বিরোধীদলের ৫৪ জন এমপির সমর্থনও তিনি পাবেন।
তবে কিছু এমপি স্বতন্ত্র হওয়ায় প্রার্থীদের প্রতি সমর্থনের চিত্রটা পুরোপুরি স্পষ্ট হয়নি।
রাজনীতি বিশেষজ্ঞ জয়াদেবা উয়াঙ্গোডা বলেন, “প্রথমদিকে রনিল বিক্রমাসিংহে এগিয়ে থাকলেও এখন ফলাফল অনেক বেশি অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। পার্লামেন্টের ক্ষমতার ভারসাম্য তার দিক থেকে সরে গেছে। এখন ফলাফল নির্ভর করছে নিজ দলের সদস্যদের ওপর রাজাপাকসেদের কতোটা নিয়ন্ত্রণ বজায় আছে তার ওপর।”
যে প্রার্থী মোট বৈধ ভোটের এক তৃতীয়াংশ পাবেন তাকে বিজয়ী বলে ঘোষণা করা হবে। কোনো প্রার্থী এ মাত্রার ভোট না পেলে সবচেয়ে কম ভোট পাওয়া প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বাদ পড়বেন। এরপর আইনপ্রণেতাদের পছন্দ অনুযায়ী বিজয়ী বেছে নেওয়া হবে।
ফলাফল যাই হোক না কেন, আন্দোলনকারীরা জানিয়ে দিয়েছেন বিক্রমাসিংহকে যেতে হবে।
প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর কলম্বোয় বিক্ষোভের ডাক দেওয়া দুমিন্দা নাগামুয়া বলেন, “আমরা রনিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছি, তিনি একজন দুর্নীতিপরায়ণ লোক। রনিল ক্ষমতায় এলে স্থিতিশীলতা থাকবে না।”