নড়াইলের ঘটনায় মাশরাফি বিন মুর্তোজা ফেইসবুকে পোস্ট নিয়ে একটি লেখা - Susupto Pathak
নড়াইলের ঘটনায় মাশরাফি বিন মুর্তোজা ফেইসবুকে পোস্ট নিয়ে একটি লেখা
রাজনীতি যার যার ইসলাম সবার!
মুফতি শহিদুল ছিলেন নড়াইল-২ এর এমপি ইসলামী ঐক্যজোটের টিকেটে। জঙ্গি দল ‘হুজি’ পরিচালনা করত সে। নড়াইল-২ এর এখন এমপি সাহেব ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তোজা। মুর্তোজা ট্রিপিক্যাল মুসলমান মডারেট যেমন হয় তাই। এরা জন্ম মৃত্যু বিয়ে সব কিছুতে এই ‘মুফতি শহিদুলদের’ কাছে কৃতজ্ঞ থাকে। ‘ওলামা কেরামদের’ প্রতি তাদের থাকে সহজাত শ্রদ্ধা ভক্তি।
নবী কটুক্তির কথা শুনলে মুফতি শহিদুল আর এইসব সাধারণ মডারেট মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া হয় একই। মুফতি শহিদুল শাতিমে রসূলের বিধান অনুসারে অভিযুক্তকে যে কোন মুসলমানের পক্ষ থেকে হত্যা করা ওয়াজিব বলেন। কারণ তিনি মুফতি তিনি জানেন এটাই ইসলামী আইন। কিন্তু মুর্তোজার কাছে সেটা প্রচলিত আইনে অভিযুক্তকে বিচারের সম্মুখিন করা। এই ভদ্রস্থ চাওয়াটা কিন্তু ব্লাসফেমি চাওয়াই। নবী কটুক্তি করলে শাস্তি পেতে হবে। এটা আজকের পৃথিবীতে আর কোন সম্প্রদায় ভাবে না।
মসজিদে একজন খতিব বা মুফতি হয়ত জুম্মার বয়ানে নবী কটুক্তিকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উশকানি দেন। কিন্তু সেদিন মসজিদে যারা জুম্মা পড়তে যান সেখানে আওয়ামী লীগ সমর্থক, বিএনপি সমর্থক, ইসলামী দল সমর্থক- তাদের রাজনৈতিক সমর্থনে পার্থক্য থাকলেও বিধর্মী পজিশনে কোন পার্থক্য নেই। মুফতি শহিদুলের আইডল যে নবী, সাধারণ মুসল্লিদের আইডল সেই একই নবী। মুফতি শহিদুল হুজি জঙ্গি দল পরিচালনা করে। তার আছে ইসলামী এনজিও। শেখ হাসিনা মাত্র চার হাজার ভোটের ব্যবধানে তাকে পরাজিত করেছিলো। এই বিপুল জনপ্রিয়তা কি করে পেলো মুফতি শহিদুল? কারণ জনগণ ইসলাম প্রিয়। মুফিত মাওলানাদের তারা ভালোবাসে। নড়াইলের মসজিদগুলি হিন্দুদের উপর হামলার পিছনে বড় ভূমিকা রেখেছে।
এই মসজিদগুলি মুফতি শহিদুলের হুজির রাজনৈতিক প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। জঙ্গিদের রানওয়ে মেরামত করতে এখন যা যা করা দরকার মসজিদগুলি প্রতি শুক্রবার একের পর এক ইসলাম অবমাননা, নরেন্দ মোদী, নূপুর শর্মা একটা না একটা ইস্যু তুলে সেটাই করে চলেছে। এটা চলতেই থাকবে। পুরো দেশে এরকম ‘মুফতি শহিদুল’ আছে একশ জন যারা মারাত্মক দক্ষ সংগঠক। বাংলাদেশের এমন কোন মসজিদ নেই যেখানকার ইমামরা জঙ্গিদের সমর্থক নয়। বাংলাদেশে খিলাফত কায়েম করতে হবে এটা মসজিদ থেকেই লিড দেওয়া হচ্ছে। এই মসজিদগুলিই এখন প্যারালাল সরকার হয়ে উঠছে। দৃশ্যমান প্রশাসন না হলে এই মসজিদ থেকে বের হওয়া মবগুলির কাছে হাতজোর করে শান্ত হতে বলে কেন? তাদের তো আচ্ছামত ধোলাই দেয়ার কথা। ঘটনার পর কঠিন পুলিশি এ্যাকশন দেখি না কেন? বিএনপিকে তো শু্ইয়ে দেওয়া হয় আন্দোলনে নামলে। কি কারণ?
মাশরাফি বিন মুর্তোজার এখানে কিছু করার নেই। তিনি বাংলা সিনেমার ‘মা আগে না বউ আগে’ টানাপড়েনে পড়ে গেছেন! এটা আওয়ামী লীগের প্রায় মোটামুটি উদার রাজনীতিকে সমর্থনকারী মুসলমানদের সকলের অবস্থা। একদিকে মুসলিম উম্মাহ, নবী প্রেম, আরেকদিকে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় সম অধিকারের টানাটানি। ফেইসবুকে উনার পোস্ট থেকে জানা যায় উনি পুলিশ র্যাব প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। তারপরও ঘটনা ঘটে যাওয়ায় তিনি মর্মাহত। প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নিতে পারল না, ঘটনাগুলি ঘটে যাবার পর তৌহদী জনতা কেন ভয় না পেয়ে নতুন কোন জেলায় একই রকম ঘটনা ঘটানোর সাহস করে- এগুলি যদি না বুঝেন তো আপনি হবেন একজন ‘অমর্ত্য সেন’ আর আমি হবো আপনার চোখে ‘হিন্দুত্ববাদী’!
শেখ হাসিনার উপর রাগ করে লাভ নেই। বিশ্বাস করেন, তার দল করে এমন হাজার হাজার নেতা কর্মীই গোপনে ‘নারী নেতৃত্ব হারাম’ লালন করে। কারণ তাদেরও একজন করে ‘মুফতি শহিদুল’ আছে। কারণ তাদের ‘কবরে যেতে হবে’ আর তখন কবরে ফেরেস্তা এসে জিজ্ঞেস করবে না তুমি আওয়ামী লীগ করতা নাকি বিএনপি করতা, জিজ্ঞেস করবে তুমি দ্বিনের জন্য কি করছো?... মুফতি শহিদুলরা এটা বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। মসজিদগুলিতে এখন তাই আড়েঠারে শেখ হাসিনাকে ফেরাউন বলছে, আলেমদের আটক করে রাখা জালিম বলছে কিন্তু কোন মসজিদেই একজন ছাত্রলীগ যুবলীগ প্রতিবাদ করে উঠছে না। যে হাতুরি আর হেলমেড বাহিনী ত্রাসের শিরোনাম হতে পারে তারা এইসব মুফতি শহিদুলদের ভয়েতেই চুপ করে থাকে না, কারণ তাদেরও ধর্মীয় অনুভূতি টনটনে। শুক্রবারের ‘তৌহদী জনতায়’ তাই নৌকা ধানের শিষ দাড়িপাল্লা হাতপাখা সব একাকার হয়ে যায়। রাজনীতি যার যার ইসলাম সবার!