মুসলিম লীগ থেকেই বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের জন্ম - Susupto Pathak
মুসলিম লীগ থেকেই বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের জন্ম
![]() |
বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ এর যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন (১৯৪৯) |
একদম নাঙ্গা সত্য কি জানেন?
যেসব সেক্যুলার ধর্মনিরপেক্ষ লীগারদের এখন হিন্দু দরদী দেখছেন এদের দাঁত-নখ বেরিয়ে পড়বে যদি হিন্দুরা সরকারকে একযোগে তাদের উপর হামলার জন্য দায়ী করতে থাকে! তখনই হিন্দুদের এক পা ভারতে, দেশপ্রেম নাই, আসলে এখানে মুসলমানদের ক্ষমতায়ন দেখে ব্রাহ্মণবাদীরা সেটা মানতে পারে না... শুনতে পাবেন এরকম কত অমৃত সুধা! উদাহরণ কিন্তু আছে। স্যার মুনতাসির মামুন কত বড় প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ লীগার কল্পনা করুন। তিনি কিন্তু নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি! যখন রানা দাশগুপ্ত ও পিযুষ বন্দোপাধ্যায় ভারত সফরে গিয়ে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে মুখ খুলেছিলো তখনই স্যার নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননি। বলে দিয়েছিলেন ভারতের মুসলমানদের দেশপ্রেম আছে, তারা নির্যাতিত হলেও ভারতেই থেকে যায় কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দুদের ভারত যাবার দিকেই নজর থাকে... হুবহু কোট করিনি, জনকন্ঠে লেখা উনার কলাম আশা করি অনেকেরই মনে আছে।
বিষয়টা হচ্ছে মুসলিম লীগ থেকেই এখানকার সব রাজনৈতিক দলের জন্ম। মুসলিম লীগ হচ্ছে বেসমেন্ট। মুসলমানরা কংগ্রেস করত বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জন্য। এখন যেমন জাতিসংঘে সদস্য হতে হবে তাই হয়, আসলে কিন্তু তাদের লক্ষ্য ওআইসি! ৫৭টা মুসলিম রাষ্ট্র মনে মনে ভাবে একদিন এমন পজিশনে যেতে হবে যাতে জাতিসংঘ নয় ওআইসিই হবে বিশ্ব নিয়ন্ত্রা! মুসলিম লীগের প্রথম ভাঙ্গনের সময় নতুন মুসলিম লীগ দাবী করল এটাই সহি আদর্শগত মুসলিম লীগ যে মুসলিম লীগ পাকিস্তানের জন্ম দিয়েছে। এই সহি মুসলিম লীগ পড়ে নাম পরিবর্তনও করে।
১৯৭১ সালের নাম পরিবর্তিত মুসলিম লীগই পূর্ব পাকিস্তানের মৃত্যু ঘটিয়ে বাংলাদেশের জন্ম দেয়। জামাত বলেন আর যত ইসলামী দল বলেন, তাদের সব মুরব্বীই যৌবনে মুসলিম লীগার ছিলো। এদেশের বাম তাত্ত্বিকদের প্রধান পুরুষরা সবাই গড়ের মাঠের মুসলিম লীগের ‘ডাইরেক্ট এ্যাকশন ডে’ মিটিংয়ে ‘নারায়ে তাকবির’ দিয়েছিলো। ভন্ডরা সেটি গোপন করে। তবে বদরুদ্দিন উমার স্বীকার করে তিনি তার বাবার সঙ্গে সেই মিটিংয়ে ছিলেন। এমনকি বাম কমিউনিস্টরা ‘তমুলদ্দিন মজলিশ’ এর মত প্যান ইসলামিক সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলো। বিএনপি বলেন জাতীয় পার্টি সবার অরিজিন মুসলিম লীগ। এখানে বাঙালী হিন্দুর কোন সম্পর্কই নাই! দেশভাগের বছর খানেক আগে থেকে পূর্ববঙ্গের সময়গুলি ইতিহাস থেকে পড়ুন। হিন্দুদের মধ্যে কি রকম আতংক মুসলিম লীগ তৈরি করেছিলো। ছোট ছোট বাচ্চারাই হিন্দুদের বলত, তোরা এই দেশ থিকা যাবি গা, এটা আমাগো দেশ!
আরও পড়ুনঃ
বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে লেখার এটা সময় নয়। একদিন হয়ত পুরোটা লিখবো। ব্লগে খন্ড খন্ড করে যা লিখেছি সেগুলিই হজম হবে না আপনাদের। বলছিলাম তাই সাম্প্রদায়িক হামলা নিয়ে। আরে ভাই এটা সরকার পাহাড়া দিয়ে রাখতে পারবে যদি রোহিঙ্গাদের মত জোন তৈরি করে হিন্দুদের কোথাও নিয়ে রাখেন। এছাড়া তো সম্ভব নয়। এদেশের মুসলমানরা সবাই দ্বিজাতিত্ত্বে বিশ্বাসী। শুধু রমজান আসলেই দেখবেন মুসলিম স্থাপত্য মুসলিম শাসন নিয়ে টেলিভিশন প্রোগ্রামগুলি যেখানে মিউজিক হিসেবে বাজানো হয় এ্যারাবিয়ান ফ্লেবার। পুরো দেশটাই হয়ে যায় তখন এ্যারাবিয়ান নাইটস! মৌলবাদ বিরোধী প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিটিও এখানে নিজেকে পরিচয় দেয় “বাঙালি মুসলমান”! এদেরকে আপনি কি করে ধর্মনিরপেক্ষ সেক্যুলারিজম শেখাবেন?
সাম্প্রদায়িক হামলার পর হিন্দুদের পাশে নয় এইসব হামলার জন্য ইসলাম দায়ী নয়-
এটা প্রমাণ করতেই সবার আগ্রহ। ঠাকুর ঘরে কে রে- আমি কলা খাই নাই! কেউ কি বলেছে এসবের জন্য ইসলাম দায়ী? তারাই প্রথম আলাপ শুরু করে, ইসলাম এগুলি সমর্থন করে না। নবীজি এসব সমর্থন করে না! তখনই ইসলাম নিয়ে নাস্তিকরা আলোচনা শুরু করে। সেটাই তখন আবার ‘ইসলাম বিদ্বেষ’ হয়ে যায়। এমনকি এসব হামলাগুলি হচ্ছে নাস্তিকদের লেখালেখির কারণেই এসব বলতে ছাড়ে না।
আমাদের সঙ্গে ব্লগিং করত পারভেজ আলম নামের একজন। এককালে সে নাস্তিকদের বন্ধুবান্ধব ছিলো। দ্রুত সে ফরহাদ মজহারের ‘ফোঁদবালক’ হয়ে যাবার পর তার লেখার সুর বদলে যেতে থাকল। সুফি ইসলাম না বাম ইসলাম দিয়ে ইসলামের খিলাফতের সিলসিলা এই দেশে বাস্তবায়ন করার কী সব গার্বেজ ফেইসবুকে প্রসব করে। অনেককাল তার লেখার খবর রাখি না। আজকাল আর এসব নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগে না। কারণ নাস্তিক কতলের সময় অভিজিত রায়কে ‘সালাফি সেক্যুলার’ বলে নাস্তিকদের জঙ্গিদের মতই সমন্তরাল দেখিয়ে ব্লগার খুনের দায় নাস্তিকদের উপর পারভেজ আলম চাপিয়েছিলো। আমরা সেসব খুব প্রতিবাদ করে লিখেছিলাম। পরে দেখি এই পারভেজ এদেশে ইসলামিকদের হাতে অনিরাপদ দেখিয়ে নেদারল্যান্ডে এসাইলাম নিয়েছে। তা নিক। কিন্তু তার সঙ্গে ইউরোপে এসাইলাম নেয়া নাস্তিকদের বইমেলায় মুলাকাত, গলাগলি, খোদ বন্যা আহমেদের সঙ্গে বসে খানাপিনা আর সহ্য হয়নি। তখনই মনে হয়েছে নিজের মনেই লিখে যাবো, এদের নিয়ে আর মাথা ঘামাবো না।
বাংলাদেশে প্রতিটি জিহাদী হামলার পর পর একদল হিন্দুদের পাশে না দাঁড়িয়ে ‘ইসলাম এসব অনুমোদন দেয় না’ ‘নবীজির শান্তির বাণী ছড়িয়ে দিতে হবে’ এসব বলে এমনভাবে আসর গরম করে যেন হিন্দুরা না, ইসলামের উপর আক্রমন হয়েছে! মানে একদল হামলা করবে আরেক দল মলম নিয়ে ইসলামের পায়ে মালিশ করবে! তো, এই তড়িকার বিভিন্ন গিরগিটির মধ্যে পারভেজ আলম একজন। নড়াইল হামলার পর সে লিখেছে আল্লা কুরআনে হামলাকারীদের উপর পাল্টা হামলা করতে অনুমোদন দিয়েছেন। কুরাইশরা মুসলমানদের উপর হামলা করেছিলো তাই আল্লাহ কুরাইশদের উপর পাল্টা হামলা চালানোর অনুমতি দিয়েছিলো। এটি নাকি শুধু সেসময়ের জন্য নয়, এই আয়াত নাকি সব যুগের জন্য প্রযোজ্য! মানে এখন যেমন হিন্দুদের উপর হামলা হচ্ছে, এখন হিন্দুরা যদি পাল্টা হামলা চালায় তার পক্ষে আল্লা থাকবেন!
হাঃ হাঃ হাঃ এই পারভেজরাই কুরাইশদের গর্দানে কোপ মারা আয়াতগুলি নিয়ে যখন আমরা লিখতাম তখন তারাই বলত এগুলো সে সময়ের জন্য প্রযোজ্য! এবার এখন সেই একই ঘটনার উপর নাযিল হওয়া সুরাকে বলছে আজকের জন্যও প্রযোজ্য! এই রকম ভন্ডামীই বড় কথা নয়, যদি খেয়াল করেন তাহলে ইতরামিটা ধরতে পারবেন, হিন্দুরা পাল্টা হামলা করলে তার পক্ষে আল্লা থাকবেন এটা যে একটা হাস্যকর দাবী সেটা সেও বুঝে। কিন্তু ঠিকই জিহাদী হামলার পর ইসলাম ও কুরআন রক্ষা করতে হাজির হয়ে গেছে। সে লিখেছে, ইসলামের নবী কখনোই অন্য কোন সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালায়নি, কোন মন্দির মূর্তির উপর আঘাত করেনি, ইসলাম নাকি ভিন্ন ধর্মের উপসানায়লকে রক্ষা করেছে জালিমদের হাত থেকে!... এসব শুনে হাসবেন নাকি কাঁদবেন?
শেষে খুবই বিনয়ের সঙ্গে এবং ভয়ে ভয়ে, সবিনয়ে জানতে চাই, হে সরকার সমর্থন ফেইসবুক লীগ, নড়াইল ঘটনায় কথিত ফেইসবুক পোস্টকারী আকাশ সাহা ও তার বাবাকে গ্রেফতার করে রিমান্ড পর্যন্ত চাওয়া হয়ে গেছে কিন্তু নড়াইলে দুইশো হিন্দু বাড়িতে হামলাকারী লুটপাটকারী অগ্নিসংযোগকারীকে আজ তিন পর্যন্ত ধড়পাকড়ের কোন চেষ্টাই করা হয়নি- কেন? সরকার পুলিশ কেন প্রতিটি ঘটনার পর হামলাকারীদের ধরতে চায় না? ভুয়া ফেইসবুক আইডি বানিয়ে প্রতিটি ঘটনায় ফাঁসানোর পরও তদন্তে ফেইক আইডির কথা উঠে আসার পরও কেন সরকার মামলা প্রত্যাহার করে নেয় না?
নড়াইলে মোহাম্মদ জাহাঙ্গির ইসলাম নামের একজনের কথা জানা গেছে যে আকাশ সাহা নামে আইডি ক্লোন করে ইসলামের নবীকে নিয়ে নোংরা কথা লিখে পোস্ট করেছিলো। রসরাজের আইডি হ্যাক করেছিলো জাহাঙ্গির আলম নামের একজন। কুমিল্লায় হনুমানের পায়ের কাছে কুরআন রেখেছিলো ইকবাল নামের একজন। নয় মাস আগের দুর্গা পুজার সময় কুমিল্লা নোয়াখালী চাঁদপুরে যে হামলা তান্ডব লুটপাট হত্যা চলে তার বিপরীতে তিন জেলায় ৫১টি মামলা হয় এবং গ্রেফতার করা হয় ৭০০ জনকে যাদের সকলেই এখন জামিন পেয়ে মুক্ত! ঐক্য পরিষদের নেতা রানা দাশগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেছেন, মামলাগুলি হচ্ছে দায়সারাভাবে। ভুক্তভোগীকে সান্ত্বনা দেয়া হচ্ছে একদিক দিয়ে অন্যদিকে অপরাধীদের নিশ্চিয়তা দেয়া হচ্ছে তাদের কিছু হবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছার অভাব আছে ঘটনার বিচার করা ক্ষেত্রে... (প্রথম আলো, ১৮ জুলাই, ২০২২)।