হিন্দু গণহত্যার ইতিহাস (গোয়ায় হিন্দু নির্যাতন ১) | Hindu Persecution in Goa 1
গোয়ায় হিন্দু নির্যাতন ১
ভ্রমণ পিপাসু মানুষ তো বটেই, আমাদেরও যে কেউ গোয়ার নাম শুনলেই মনের চোখে ফুটে ওঠে নয়নাভিরাম সমুদ্র সৈকত, আর ইউরোপীয় ধরনার সুন্দর শহরের দৃশ্য। বলিউড মুভি ইন্ডাস্ট্রির কল্যাণে গোয়ার এই ছবিই আজ আমাদের সবার কাছে পরিচিত।
আরও পড়ুনঃ পর্ব ১
বর্তমানে গোয়া ভারতের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত ক্ষুদ্রতম অঙ্গরাজ্য। গোয়ার উত্তরে মহারাষ্ট্র এবং পূর্ব ও দক্ষিণে কর্ণাটক রাজ্য। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা অর্জনেরও প্রায় দেড় দশক পর, ১৯৬১ সালের ১৯ ডিসেম্বর ভারত সরকার এটিকে ভারতের অংশ করে নেয়। (আরও পড়ুন Annexation of Goa)
গোয়ার প্রকৃত ইতিহাস অতি প্রাচীন। মহাভারতে গোয়াকে গোমন্তক (সংস্কৃত) নামে উল্লেখ করা আছে। গোয়া ছিল সম্রাট অশোকের অধীনে মৌর্য সাম্রাজ্যের একটি অংশ। এরপর ৭০০ বছর বিভিন্ন হিন্দু রাজবংশের নিয়ন্ত্রণে ছিল গোয়া। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চালুক্য (৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শতক), রাষ্ট্রকূট (৮ম থেকে ১০ম শতক) এবং কদম্ব রাজবংশ (১০০৬ থেকে ১৩৫৬ অব্দ)। কিন্তু ১১৯৮ সালে শেষ চালুক্য রাজার মৃত্যুর পরে মিত্রদের সাথে কদম্বদের সম্পর্ক অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে। সামগ্রিকভাবে এই অঞ্চলে তাদের দখলদারিত্ব ভঙ্গুর হয়ে পড়ে, যা পরবর্তীতে মুসলিমদের সহজেই গোয়া দখলের পথ প্রশস্ত করে দেয়।
বাহামনি সালতানাত দক্ষিণ ভারতের প্রথম স্বাধীন মুসলিম রাজ্য ছিল। তুর্কি বংশোদ্ভূত সেনাপতি আলাউদ্দিন বাহমান শাহ দিল্লির সুলতান মুহাম্মদ বিন তুগলকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ১৩৪৭ সালে বাহমানি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন (আরও পড়ুন, বাহামনি সালতানাত, নিচের ছবিতে বাহামনি সালতানাত এর পরিসীমা)। ১৩৫০ সালে মুসলিম বাহামনি সালতানাতের অন্তর্ভুক্ত হয় গোয়া।
বাহামনি সালতানাত এই সময়ে
- ধ্বংস করে দেয় গোয়ার অধিকাংশ মন্দির এবং অন্যান্য স্থাপত্য নিদর্শন।
- স্থানীয় পুরোহিতদেরকে তারা হত্যা করে, আর তাদের সম্পদ লুট করতে থাকে।
- কেবল তাম্বদি সুরলায় অবস্থিত শ্রী মহাদেব মন্দিরটি (নিচের ছবি) আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল। সেখানেই নিয়ে যাওয়া হয়েছিল অন্যান্য বিভিন্ন মন্দিরের অক্ষত দেবতা মূর্তিগুলোকে।
- বাহামনি সালতানাত তাদের এজন্ডায় রেখেছিল প্রতিবছরে ১ লক্ষ হিন্দুদের হত্যা করা হবে।
চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতকে বিজয়নগরের হিন্দু সাম্রাজ্যের কাছে পরাজয়ের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে ১ম বাহামিনি শাসনের। রাজা ভেঙ্কাটাপতি দেব রায় (Venkatapati Deva Raya) বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে বাহামনিদের পরাজিত করেন। তাঁর বীরত্ব নিয়ে লেখতে গেলে ১০ খানা আর্টিকেলেও স্থান সংকুলান হবে না। তাই তাঁকে নিয়ে পরে নতুন সিরিজ লিখবো। নিজেকে তিনি বলতেন, "হিন্দুদের রক্ষক"। তিরুমালায় ভেঙ্কেটেশ্বর স্বামী মন্দিরে তার মুর্তি আছে।
কিন্তু ১৪৭০ সালেই তারা আবার ফিরে আসে এবং পুনরায় গোয়া দখল করে নেয়। ওই বিজয়ের মাধ্যমে পঞ্চদশ শতকের শেষ দিকে গোয়া বনে যায় ডেকানের মুসলিম বাহমানি রাজ্যের একটি অংশ । ১৪৯২ সালে বাহমানি সাম্রাজ্য পাঁচটি ছোট রাজ্যে বিভক্ত হয়ে যায়, যেগুলোর নাম ছিল:
- বিদার,
- বেরার,
- আহমাদনগর,
- গোলকোন্দা ও
- বিজাপুর।
গোয়া ছিল বিজাপুরের অন্তর্ভুক্ত, এবং এর শাসনকর্তা ছিলেন সুলতান ইউসুফ আদিল শাহ খান
(নিচের ছবি)।
লেখক এর প্রফাইলঃ Dolon Chapa
ফুটনোটগুলি