বৈদিক জ্ঞানের জানালাটা খুলে দিন | Shri Kushal Baran Chakraborty
একটি ঘরে অনেক দিন থেকেই অসংখ্য জীবাণুর সংক্রমণ। আমরা একটি একটি করে ঘরের সেই জীবাণুকে ধ্বংস করতে পারব না। কিন্তু একটি কাজ করলেই জীবাণু সকল নিমেষেই ধ্বংস হতে পারে; আমরা পূর্বদিকের জানালাটা খুলে দিতে পারি। এতে খোলা জানালায় ঘরে সূর্যের আলো প্রবেশ করবে। সূর্যের আলোতে সকল জীবাণু এমনিতেই পর্যায়ক্রমে ধ্বংস হয়ে যাবে। বিষয়টি অথর্ববেদেও বলা হয়েছে। পূর্বদিক থেকে সূর্যের উদয়ে জগতের দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান সকল প্রকারের জীবাণু কিট বিনষ্ট হয়ে যায়। সূর্যের বিশুদ্ধ তীব্র আলোতে এই জীবাণুবাহী কিটেরা আর বংশবৃদ্ধি করতে পারে না।
উৎ পুরস্তাৎ সূর্য্য এতি বিশ্বদৃষ্টো অদৃষ্টহা৷
দৃষ্টাংশ্চ ঘ্নন্নদৃষ্টাংশ্চ সর্বাংশ্চ প্রমৃণন্ ক্রিমীন্॥
(অথর্ববেদ:৫.২৩.৬)
"বিশ্ববাসী সকলেই দেখে সূর্য্য পূর্বদিক থেকে উদিত হয়। সূর্য্যের উদয়ে জগতের দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান সকল বীজাণু কিট বিনষ্ট হয়ে যায়, যারা বিবিধ প্রকারের রোগব্যাধির কারণ। "
দৃষ্টাংশ্চ ঘ্নন্নদৃষ্টাংশ্চ সর্বাংশ্চ প্রমৃণন্ ক্রিমীন্॥
(অথর্ববেদ:৫.২৩.৬)
"বিশ্ববাসী সকলেই দেখে সূর্য্য পূর্বদিক থেকে উদিত হয়। সূর্য্যের উদয়ে জগতের দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান সকল বীজাণু কিট বিনষ্ট হয়ে যায়, যারা বিবিধ প্রকারের রোগব্যাধির কারণ। "
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সকল জীবের মধ্যেই ঈশ্বরের উপস্থিতি রয়েছে। এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণু ঈশ্বরের সৃষ্ট হলেও, এরা যেহেতু মনুষ্য সহ এই বীজাণুরাই বিবিধ প্রকারের রোগব্যাধির কারণ। তাই এ বিবিধ প্রকারের রোগবাহী জীবাণুকে ধ্বংস করে দেয়া হয়।যেন তারা রোগব্যাধি ছড়াতে না পারে। এদের ধ্বংস করতে আমরা যদি একটি একটি করে জীবাণু ধ্বংস করতে চাই, তবে আমরা প্রচণ্ড ভুল করব। আমাদের বৃথাই পণ্ডশ্রম হবে। এক এক করে সকল জীবাণুর পিছনে দৌড়ায়ে তাদের ধ্বংস করা কখনই সম্ভব নয়। তাদের সমষ্টিগতভাবে ধ্বংস করতে হবে। ঠিক একইভাবে বিভিন্ন কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত মতান্তরের জঞ্জালে ভরে গেছে আমাদের সম্প্রদায়ে।
আমরা এই মত-মতান্তরের জঞ্জালের পেছনে লেগে এ অনৈক্যের জঞ্জাল শেষ করতে পারব না। শুধু যদি আমরা আমাদের পূর্বদিকের জানালাটা খুলে দেই, তবে বৈদিক জ্ঞান এমনিতেই সকল জঞ্জাল বিনাশ করে একদিন জাতিগতভাবে ঐক্যবদ্ধতা এনে দিবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রাণ ভরিয়ে সকল তৃষ্ণা মিটিয়ে দিয়ে ঈশ্বরের কাছে অনন্ত প্রাণশক্তি কামনা করেছেন। ঈশ্বরে ভুবনে ঈশ্বরের কর্মে জগতের কল্যাণে আরও নিজেকে সমর্পিত করতে চেয়েছেন। দুই নয়নে সত্যের আলো, বৈদিক জ্ঞানের আলো, মুক্তির আলো কামনা করেছেন। আলোতেই অন্ধকার বিদূরিত হয়ে সত্যধর্মের দর্শন হয়।
"প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে
মোরে আরো আরো আরো দাও প্রাণ।
তব ভুবনে তব ভবনে
মোরে আরো আরো আরো দাও স্থান ॥
আরো আলো আরো আলো
এই নয়নে, প্রভু, ঢালো।"
মোরে আরো আরো আরো দাও প্রাণ।
তব ভুবনে তব ভবনে
মোরে আরো আরো আরো দাও স্থান ॥
আরো আলো আরো আলো
এই নয়নে, প্রভু, ঢালো।"
অনন্ত মত-পথ যেমন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দৈবী সম্পদ। তেমনি ইদানীংকালের অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ব্যক্তিকেন্দ্রিক পথপথে জঞ্জালের উৎপত্তি হচ্ছে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক বা এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক মতবাদগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বেচ্ছাচারী মতবাদ। এই মতবাদগুলো এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক হওয়ায় কখনই সকলের কাছে সর্বজনীন এবং গ্রহণযোগ্য হয় না। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে গত কয়েকটি শতাব্দীতে সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষদের মধ্যে এই ব্যক্তিকেন্দ্রিক মতবাদগুলো প্রাদুর্ভূত হয়েছে। কখনো গুরুবাদের নামে আবার কখনো কোন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে স্বতন্ত্র সম্প্রদায়ের নামে। বৈদিককাল থেকেই পঞ্চমত প্রচলিত। কিন্তু এই নব্য সম্প্রদায়গুলো বৈষ্ণব, শাক্ত, শৈব ইত্যাদি প্রাচীন বৈদিক সম্প্রদায়ের নামকে অনুসরণ করে বর্তমানে বিভিন্ন স্বতন্ত্র সম্প্রদায় তৈরি করছে। এই মতবাদগুলো অধিকাংশই ব্যক্তি সর্বস্ব হওয়ায় বেদ ও বেদান্ত পরম্পরার সাথে যোগসূত্র সামান্য। তাই শ্রীশঙ্করাচার্য বলেছেন, বৈদিক জ্ঞান লাভ করে বেদের প্রামাণ্যবাক্যে দৃঢ় বিশ্বাস করতে হবে।একমাত্র বৈদিক বিশুদ্ধ জ্ঞান অন্তরে প্রবেশ করলেই স্বধর্মে নিষ্ঠা জন্মাবে। স্বধর্মনিষ্ঠ পুণ্যবান ব্যক্তির চিত্ত বিশুদ্ধ হয়ে মুক্তির পথে অগ্রসর হয়।
শ্রুতিপ্রমাণৈকমতেঃ স্বধর্মনিষ্ঠ তয়ৈবাত্মবিশুদ্ধিরস্য।বিশুদ্ধবুদ্ধেঃ পরমাত্মবেদনং তেনৈবসংসারসমূলনাশঃ।
(বিবেকচূড়ামণি:১৪৮)"শ্রুতি বা বেদের প্রমাণ বাক্যে যার দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে, সেই পুণ্যবান ব্যক্তির স্বধর্মে নিষ্ঠা জন্মে। স্বধর্মনিষ্ঠ ব্যক্তির চিত্ত বিশুদ্ধ হয়।বুদ্ধি বিশুদ্ধ হলে পরমাত্মার জ্ঞানলাভ হয়। এ বিশুদ্ধ জ্ঞানই সংসারের অজ্ঞানকে বিনাশ করে।"