Translate

হিন্দু পরিবারের বাচ্চাদের কি ছোট থেকে আবশ্যিকভাবে বেদ এবং ভগবদ্গীতা পাঠ করানো উচিত? - Sojasapta2

হিন্দু পরিবারের বাচ্চাদের কি ছোট থেকে আবশ্যিকভাবে বেদ এবং ভগবদ্গীতা পাঠ করানো উচিত Study of Vedas and Gita,Sojasapta,Education
ভগবদ্গীতা

লেখকঃ Arghya Dutta

প্রথমেই একটা বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার। ধর্মটা কোনো ম্যাজিক না, আর গ্রন্থগুলো "সগ্গে যাওয়ার" কোনো টিকিট না। বুঝে না পড়তে পারলে বেদ-গীতা পড়ার কোনো মানেই হয় না!


শিক্ষা একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। একদম ছোটো বয়সে ১-২, গুণ-ভাগ না শিখলে কেউ দ্বাদশ শ্রেণিতে উঠে ক্যালকুলাস করতে পারবে না। আমি যদি আজকে পাঁচ বছরের একটা শিশুকে রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস বিশ্লেষণ করতে দিই, ও বুঝবেই না বিশ্লেষণটা আবার কীভাবে করে!


ঠিক সেভাবেই খুব ছোটো বয়সে বেদপাঠ শেখানো সম্ভব না। আগে শিশুকে মাতৃভাষা শিখতে হবে, আজকের দুনিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ইঙরেজিটা জানতে হবে, মৌলিক গণিত জানতে হবে, বিজ্ঞান জানতে হবে, দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য জানতে হবে। এইসব শেখানোর প্রক্রিয়া যতোদিন চলমান থাকবে, ততোদিন রামায়ণ-মহাভারত থেকে অল্প কয়েকটি ছোটো-ছোটো গল্প, তা-ও যা শিশুমন জারণ করতে পারবে, শোনানো যেতে পারে।



যখন মৌলিক ভাষাশিক্ষা মোটামুটি শেষ হয়ে যাবে, তখন আস্তে-আস্তে রামায়ণ আর মহাভারতের আরও যে শিক্ষণীয় ঘটনাগুলো আছে, সেগুলো একটু বড়ো আকারে শেখানো যেতে পারে। অবশ্যই নিজের ভাষায়; ওইটুকু বয়সে সংস্কৃত ধরাতে গেলে অংটং-য়ের বেশি দূর আগানো যাবে না। বাংলা রামায়ণ বা মহাভারত হিসেবে ছোটোদের জন্য সেরা হলো রাজশেখর বসু বা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর দুইটা।

তারপরে প্রথম-চতুর্থ শ্রেণিতে সংস্কৃত বর্ণপরিচয় এবং মৌলিক ভাষাশিক্ষণ শেষ করতে হবে। এইটা কীভাবে হবে? পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এইটার জন্য আলাদা পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করবে (বর্তমানে বাংলাদেশে বোর্ড থেকে ধর্ম পাঠ্যপুস্তক দেওয়া শুরু হয় তৃতীয় শ্রেণি থেকে)। এই চার বছরে শব্দ, বাক্যগঠন ইত্যাদি শেখা শেষ হবে।


তারপরে পঞ্চম শ্রেণি থেকে হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা নামক যে বইটা বোর্ড থেকে দেওয়া হয়, ওইটা দিতে হবে কিন্তু বইটার খোলনলচে পাল্টে ফেলতে হবে। এখনকার শিক্ষাক্রমে চলমান বইগুলো একদমই উপযুক্ত নয় (তবে হ্যাঁ, যোগব্যায়ামের অংশটুকু বহাল রাখা যেতে পারে)। এগুলো পাল্টে কিছু-কিছু করে গীতা, উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারত নিয়ে আলাদা অধ্যায় রাখতে হবে। বেদ-বেদান্তসিদ্ধ ঈশ্বরের মৌলিক ধারণাটি একদম পরিষ্কার হয়ে যাবে এতে।

৬ষ্ঠ-৭ম এই দুই শ্রেণিতে গীতা পড়াতে হবে। যেহেতু সংস্কৃত আগেই আয়ত্তে আছে, তাই গীতার শ্লোকগুলো বুঝতে তেমন একটা সমস্যা হবে না।

৮ম-৯ম শ্রেণিতে উপনিষদের বিস্তারিত আলোচনা করা যেতে পারে। গীতায় যা সংক্ষেপে আলোচিত হয়েছে, মুখ্য ১২ উপনিষদে তা-ই বিস্তারিত বিবৃত হয়েছে। বুঝতে সুবিধা হবে।

তারপরে ১০ম শ্রেণির জন্য আলাদা পাঠ্যপুস্তক দিতে হবে। ওইখানে বেদ নিয়ে আলোচনা থাকবে। অবশ্যই সম্পূর্ণ আলোচনা তো আর করা সম্ভব না, তাই নির্বাচিত ও প্রয়োজনীয় অংশগুলো মন্ত্র উল্লেখ করে-করে উপনিষদের ভাষ্যসহকারে রাখতে হবে।

এই পূর্ণ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে গেলে আশা করি, সব শিক্ষার্থীই সনাতন শাস্ত্র সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা পেয়ে যাবে।

মনে রাখতে হবে, স্কুলে বিদ্যা গেলানো হলে তার সার্থকতা কেবল উগরে দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। তাই স্কুল বা সরকার কেবল মূল সারটুকু শেখাবে; শিক্ষার্থীর মনের ভেতরের স্ফূলিঙ্গটা জ্বেলে দেবে; পূর্ণ গীতা বা পূর্ণ বেদ সে নিজের ইচ্ছাতেই পড়তে ও বুঝতে পারবে।

এই উত্তরের অন্য কিছু উত্তরে কিছু উত্তরকারী বলেছেন যে, বেদ বা গীতা পড়ার কোনো দরকারই নেই। আমি সবার মতামতের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই সেই মতের সঙ্গে একমত হতে পারছি না। আমার মনে হয়, আমার পরিপার্শ্বে থাকলে তাঁদের মতও ভিন্নতর হতো!


চিত্রসূত্র: গুগল
Study of Vedas and Gita

ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

আপনাদের ক্লিক এই Website টি সচল রাখার অর্থ যোগাবে।