কলকাতার খিদিরপুর এলাকার ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত | Details about the incident in Khidirpur area of Kolkata
কলকাতার খিদিরপুর এলাকার একটি উত্তেজক ঘটনা এবং গন্ডগোল নিয়ে দুদিন ধরে ফেসবুকে অনেকেই লিখছেন। যেহেতু মেইনস্ট্রীম মিডিয়া খবরটিকে এড়িয়ে গিয়েছে, সেজন্যে খবরটি সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক, যেমন গন্ডগোল ঠিক কখন শুরু হয়েছিলো, উৎপত্তি কোথায় ও কিভাবে, পুলিশ আধিকারিকদের বক্তব্য কি, এই সব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানা ওই এলাকার বাইরের লোকদের পক্ষে পুরোপুরি সম্ভব নয়। যতটা সম্ভব খবর সংগ্ৰহ করতে পেরেছি, সেটার ভিত্তিতে লিখছিঃ
১) ওটা বন্দর বিধানসভা এলাকার অন্তর্গত ৭৮ নম্বর ওয়ার্ড। একবালপুর থানা।
২) ওয়ার্ডটি মুসলিম অধ্যুষিত ওয়ার্ড। মুসলিম জনসংখ্যা কমপক্ষে ৮০ শতাংশ। ১৯৯২, ১৯৯৩ সালেও ওখানে খুব গন্ডগোল হয়েছিলো।ওয়ার্ডে বসবাসকারীরা মূলত বিহারী মুসলিম। হিন্দুরাও মূলত বিহারী হিন্দু, কিছু উত্তরপ্রদেশের হতেও পারে।
৩) মূল গন্ডগোলটা হয়েছে ময়লা ডিপো বলে একটি জায়গাতে। একটা ছোট্ট এলাকায় কিছু হিন্দু পরিবার বাস করে। চারধারেই মুসলমান এলাকা। হিন্দুদের টাইটেল ধানুক, মল্লিক, হেলা, বাল্মিকী। তফশিলী হিন্দু গোষ্ঠীর মানুষ। সম্ভবতঃ প্রায় সবাই বিহারী হিন্দু। এদের ছোট্ট এলাকাটার উপরেই যথেচ্ছ ইট পাটকেল বৃষ্টি হয়েছে। বোমাবাজিও অবাধে হয়েছে।অবাধে ঘরবাড়ী, বাইক ভাঙচুর হয়েছে।
৪) মুসলিম গুন্ডারা একবালপুর থানা ঘিরে রেখেছিলো। পুলিশ শুধু নীরব দর্শক ছিল না, পুলিশ রীতিমতো আতঙ্কিত ছিলো। ডি সি পোর্ট সহ উর্ধতন অফিসাররা বাহিনী নিয়ে পৌছোবার পর সামান্য কিছুটা মুভমেন্ট হয়েছিলো। কিন্তু আইনের শাসন, ভারতবর্ষের আইন ও সংবিধান আদৌ ওখানে চলে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ঠ সংশয় রয়েছে। স্পষ্টতই পুলিশ ভীত ও আতঙ্কিত ছিলো।
৫) গন্ডগোলের সূত্রপাত পতাকা লাগানো নিয়ে। দলীয় পতাকা নয় কিন্তু। ওইরকম জায়গাগুলিই মিনি পাকিস্তানের কথা মনে করিয়ে দেয়।
৬) ওখানকার ওই অবাঙ্গালী হিন্দুরা যথেষ্ঠ যথেষ্ঠ সাহসী ও লড়াকু। বহুবার তাদের লড়াকু মানসিকতার পরিচয় প্রত্যক্ষ করা গেছে। হিন্দু সমাজের আসল ক্ষত্রিয় রক্তের উত্তরাধিকারি। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তুলনামূলক সংখ্যায় বেশী বেশী পরিবর্তন আসছে। অন্যান্য কিছু প্রতিকূলতাও আসছে। সবচাইতে বড়ো কথা, এদের পাশে মূল হিন্দু সমাজ কতটা থাকে, কতটা সাপোর্ট দেয়, তা নিয়েও সংশয় থেকেই যায়।
আমার পোস্ট কিন্তু ওই ঘটনার বা এলাকার বিবরণ দেবার জন্য নয়।
![]() |
ইতিহাস পড়তে ক্লিক করুন |
ফেসবুকে আমরা অনেকেই লিখছি, এই ধরণের ঘটনা হলেই লিখি,
"হিন্দু তুমি ঘুমিয়ে থাকো", "৫০০ টাকার ভাতা তো পাচ্ছেন", "হিন্দু, আর কতদিন চোখ বুজে থাকবে", "ওখানকার হিন্দুরা চুপ করে আছে কেনো",ইত্যাদি ইত্যাদি।
মানে যারা এইধরণের কথা লিখছে, সেই কয়েকজন ঘুমিয়ে নেই, তাদের এলাকায় হলে তারা মাঠে নেমে দেখিয়ে দিতো লড়াই কাকে বলে, তারা সদা জাগ্ৰত, ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা লিখছি, ভাবুন, ভাবা প্র্যাকটিস করুন। মানে ভাবখানা এইরকম, আমরা যারা লিখছি, তারাই কেবল সঠিক টা ভাবতে পারছি। বাকিরা পারছে না।
কেউ আমরা কখনো লিখছি না, আমি এটা করতাম, করেছি, আবার দরকার হলে করবো। আমার পক্ষে এই করা সম্ভব এবং আমার এলাকা বা আমার কাছাকাছি এলাকায় হিন্দু আক্রান্ত হলে আমি সেখানে পৌঁছাবো। এই এই করবো।
দেখুনঃ
যতোজন আমরা লিখছি, হিন্দু ঘুমিয়ে আছে (মানে অন্ততঃ সে ঘুমিয়ে নেই, সেই ততোজনই যদি রাস্তায় নামে(অন্য আর কেউ যদি নাও নামে) তাহলেই বিশাল সংখ্যা হয়ে যায়। বহু এলাকায়। বাস্তবে তো তা হয় না। তার মানে তো এটাই দাঁড়ায় যে আমাদের জাগরণ ফেসবুকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আমরা, আমরা অপরের ঘাড়ের উপর দিয়েই সব পার করতে চাইছি। হ্যাঁ, আমরা হয়তো সচেতন।ঘটনাপ্রবাহ বা তার বিপদ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। কিন্তু মোকাবিলা করার জন্য আদৌ মানসিকভাবে প্রস্তুত নই। আমরা লিখে বা বলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ করতে চাই। নিজেদের পরিস্থিতির মধ্যে নিয়ে ফেলতে এক শতাংশও ইচ্ছুক নই।
সেরকম হতেই পারে। তা হলে ফেসবুকে ওই ধরণের অপরকে উপদেশ সূচক বা করণীয় কি এই ধরণের কথা বলা থেকে আমাদের নিজেদের বিরত রাখা প্রয়োজন। পরিস্থিতি জানানো দরকার। কিন্তু উপদেশ দেওয়া বা কর্তব্য স্মরণ করানো নয়। নিজে না করে অন্যকে করতে বলাটা অনুচিত এবং ধৃষ্টতাও বটে। বৃদ্ধ বা অথর্ব ব্যক্তি হলে শুধু অপরকে বলাটা হয়তো শোভা পায়।
সমস্যার সমাধান সমাজের হাতেই আছে। লড়াকু সাহসী শ্রেণীকে নেতৃত্বের প্রথম সারিতে তুলে আনা। এরা আর্থিকভাবে এবং শিক্ষাগতভাবে (পুঁথি গত শিক্ষা) অনেকটা পিছিয়ে। কিন্তু অন্যান্য বহু ক্ষেত্রে এরা অনেকটা এগিয়ে। বিশেষ করে প্রধান কম্পোনেন্ট হচ্ছে "সাহস"। ক্ষত্রিয়ের প্রথম বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে সাহস।সমাজকে রক্ষার দায়িত্ব যেমন ক্ষত্রিয়ের, তেমনি শাসনভারও ক্ষত্রিয়ের হাতেই থাকা উচিত।
হিন্দু সমাজের সাহসী যোদ্ধা শ্রেণীকেই সমাজের মূল নেতৃত্বে উন্নীত হতে হবে। সমস্যার সমাধান আপনিই হয়ে যাবে।
লেখকঃ Rajat Roy
![]() |
ইতিহাস পড়তে ক্লিক করুন |