Translate

রুকসানা কৌসার, এক লড়াকু নারীর কথা | Ruksana Kausar, the story of a woman warrior


রুকসানা কৌসার

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সালের এক রবিবারের রাত। তিন জন সশস্ত্র লস্কর-এ-তাইবা আততায়ী আক্রমণ চালায় ওয়াকালাত হুসেনের বাড়িতে। ওয়াকালাত হুসেনের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে, তাঁকে বাধ্য করা হয় তাঁর পাশের বাড়িতে প্রবেশ করানোর জন্য। পাশের বাড়িতে ওয়াকালাত হুসেনের বড় দাদা নুর হুসেন পরিবার সমেত বাস করতেন।নুর হুসেন বিপদের গন্ধ পেয়ে দরজা খুলতে অস্বীকার করেন। আততায়ীরা তখন জানলা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে। নুর হুসেন ও তাঁর স্ত্রী রাশিদা বেগাম ততক্ষনে তাঁদের মেয়ে রুকসানা কৌসারকে খাটের তলায় লুকিয়ে ফেলেছিলেন। নুর, তাঁর স্ত্রী রাশিদা ও ছোট ছেলে আইজাজ আততায়ীদের বুটের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হতে হতে বাধা দিতে থাকেন। এই ঘটনা দেখে রুকসানা খাটের তলা থেকে কুঠার হাতে বেড়িয়ে আসেন এবং লস্কর জঙ্গির কমান্ডারের মাথায় সজোরে আঘাত করেন। অপর জঙ্গি গুলি চালিয়ে রুকসানার বাবাকে আহত করলে বাড়ির বাকি লোকেরা তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাল্টা আক্রমণ করেন।


রুকসানা তাঁদেরই একটি AK-47 রাইফেল তুলে নিয়ে ভাইকে দিয়ে দেন এবং অন্যজনের থেকে আরেকটি রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে লস্কর কমান্ডারকে গুলি করে হত্যা করেন। তিনি ও তাঁর ভাই অন্য জঙ্গিদের গুলি করে আক্রমন করলে জঙ্গিরা বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। এরপর বাড়ির সকলে মিলে থানায় গিয়ে রাইফেলগুলি জমা দেন ও ঘটনার সম্পর্কে তাঁদের জানান।

পরবর্তীকালে মৃত জঙ্গিকে লস্করের কমান্ডার আবু ওসামা বলে চিহ্নিত করা হয়।



জম্মু -কাশ্মীরের রাজৌরি জেলার কালসিতে ১৯৮৯ সালে এক গুজ্জার পরিবারে রুকসানা জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর বাড়ি ভারত - পাকিস্তান সীমান্তের থেকে মাত্র ২০ কিমি দুরে, ঘন জঙ্গলে আবৃত জায়গায় অবস্থিত।এই জঙ্গলে লস্কর জঙ্গিদের বাস। বেশ কিছুদিন থেকেই রুকসানাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি লস্করের কমান্ডার দিয়ে আসছিল। তারই পরিণতিতে ঘটে এই আক্রমন।


রুকসানার এই পাল্টা আক্রমনের জন্য পরবর্তীকালে ৩১ শে অক্টোবর, ২০০৯ সালে রুকসানাদের বাড়িতে বোমা বর্ষণ করে প্রতিশোধ নেয় লস্কর জঙ্গিরা। কিন্তু বোমাগুলি তাঁদের বাড়ির থেকে দুরে গিয়ে ফাটে। জঙ্গিরা পাহাড়ের উপর থেকে এলোপাথাড়ি গুলি বর্ষণও করে কিন্তু সেই সময় বাড়িতে কেউ না থাকায় কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারেনি। কারণ তার আগেই তাঁদের সপরিবারে সরকারী বাড়িতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।


মাধ্যমিক পাশ রুকসানা বর্তমানে পুলিশের কনস্টেবলরূপে চাকরিরতা।


রুকসানা এই বীর কর্মের জন্য জাতীয় সাহসিকতার পুরস্কারের সাথে সাথে সর্বোত্তম জীবন রক্ষা পদক, সর্দার প্যাটেল পদক, রানি ঝাঁসি সাহসিকতা পদক ও আস্থা পদক প্রাপ্ত হন।

অদম্য সাহসিকতা এবং বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে পাল্টা আক্রমন করার ও নিজেকে রক্ষা মানসিকতার জন্য বীরকন্যাকে কুর্নিশ জানাতে হয়। প্রতিটি ঘরে ঘরে যেন রুকসানারর মেয়ের জন্ম হয়।


চিত্রসুত্রঃ গুগল

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

আপনাদের ক্লিক এই Website টি সচল রাখার অর্থ যোগাবে।