Translate

এটা কি স্রেফ দুর্ঘটনা, নাকি অন্য কোনো রহস্য আছে? | সংখ্যালঘু হিন্দু বাংলাদেশ

এটা কি স্রেফ দুর্ঘটনা, নাকি অন্য কোনো রহস্য আছে?,সংখ্যালঘু হিন্দু বাংলাদেশ, খোকন বসাক,বাংলা news,BdNews24,SomoyNews,Breaking news today,World news

গত বৃহস্পতিবার রাত ২ টার দিকে চট্টগ্রাম-রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড মহাজন পাড়া এলাকার খোকন বসাকের সেমিপাকা টিনশেড বাড়িতে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে একই পরিবারের পাঁচ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে, এছাড়াও দগ্ধ হয়েছেন আরও একজন।

নিহতরা হলেন, 

১. বাবা কাঙ্গাল বসাক (৬৮), ২. মা ললিতা বসাক (৫৭), ৩. স্ত্রী লাকি বসাক (৩২), ৪. ছেলে সৌরভ বসাক (১২) এবং ৫. মেয়ে চয়নিকা বসাক (৪), আগুনে দগ্ধ হন গৃহকর্তা খোকন বসাককে (৪২) তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে খোকন বসাকের মালিকানাধীন সিএনজি অটো রিকশাটিও ভস্মীভূত হয়।

এটা কি স্রেফ দুর্ঘটনা, নাকি অন্য কোনো রহস্য আছে?,সংখ্যালঘু হিন্দু বাংলাদেশ, খোকন বসাক,বাংলা news,BdNews24,SomoyNews,Breaking news today,World news

রাতে অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ পেয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) ও রাঙ্গুনিয়া থানার ওসিসহ পুলিশ ফোর্স এবং ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এ সময় বসতঘরের জানালার গ্রিল কেটে আগুনে দগ্ধ ৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। অগ্নিকাণ্ডে খোকন বসাকের মালিকানাধীন সিএনজি অটো রিকশাটিও ভস্মীভূত হয়।

রাঙ্গুনিয়া ফায়ার স্টেশনের ইনচার্জ কামরুজ্জামান সুমন জানান, 

রাত ২টা ১০ মিনিটের দিকে টিনশেড ঘরে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৫টি গাড়ি ঘটনাস্থলে যায়। দরজা ভেঙে একজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। ভোররাত ৪টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। রান্না ঘরের চুলা থেকে আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। পেশায় সিএনজি অটোরিকশা চালক খোকন বসাক বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সেমিপাকা ঘরে বসবাস করতেন। তিন কক্ষবিশিষ্ট ঘরটিতে বহির্গমন দরজা ছিল মাত্র একটি। সেই দরজা সন্নিহিত ছিল তাদের রান্নাঘর।

স্থানীয়দের ধারণা, 

রান্না ঘরের চুলা থেকে আগুন লেগে সেখানে মজুদকৃত বিপুল পরিমাণ কাঠের লাকড়ির মাধ্যমে তা পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে।

আগুনের মধ্য দিয়ে ছুটে বেরিয়ে আসা খোকনেরও শরীরের ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তার বাম হাত, বুক ও পিঠ ব্যান্ডেজে মোড়া। মাথা মুখেও পোড়া চিহ্ন রয়েছে। সন্তানসহ নিকটজনদের হারানোর বেদনায় মুষড়ে পড়া খোকন এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।

গত শনিবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন খোকন বসাক বলেন-

১৯৯৬ সালে দাঙ্গার সময় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ঘর। সে সময় আগুনে সবকিছু পুড়ে গিয়েছিল। কিন্তু কেউ হতাহত হয়নি।

২০০৮ সালে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বিয়ের জন্য বানানো গেট। সে সময় আমি বিয়ে করে যখন শহর থেকে স্ত্রীকে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম তখন রাতে বিয়ের গেটে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দেয়। পোড়া গেট দিয়েই নববধূকে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করেছিলাম।

তার আট বছর পর ২০১৬ সালে ফের আগুন লেগেছিল রান্নাঘরে। আশপাশের মানুষ এবং নিজেরা নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হই।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আবারও আগুন লাগে ঘরে। তবে আগের আগুনের মতো নয়, এবারের আগুন ছিল সর্বগ্রাসী। এ আগুন থেকে নিজে প্রাণে রক্ষা পেলেও স্ত্রী, দুই শিশুসন্তান ও বৃদ্ধ মা-বাবা পুড়ে অঙ্গার হয়েছে।

খোকন বলেন, 

এখন আমার মনে হচ্ছে, এসব আগুনের ঘটনার নেপথ্যে কোনো রহস্য আছে। বৃহস্পতিবার রাতে আমি রান্নাঘর দেখে ঘুমাতে গেছি। চুলার ওপর পানির পাতিল ছিল। সেখান থেকে কীভাবে আগুন লাগতে পারে? আমি যে সিএনজি অটোরিকশা চালাই সেটাতেই আগুন লাগানো হয়। এ আগুন ঘরে ছড়িয়ে পড়ে।

এসব কি স্রেফ দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য আছে? 

খোকন বলেন,

প্রতিবেদক জিজ্ঞেস করেন, 

আপনি কি কাউকে সন্দেহ করেন? কেউ ইচ্ছাকৃত এ আগুন লাগিয়েছে এমনটি মনে করেন? তাকে এমন প্রশ্ন করা হলেঃ 

খোকন বসাক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন। তারপর বলেন, না, কারও প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। সব ভগবান জানেন।

আরো বলেন, 

আগুন লাগার সময় আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। ১২ বছরের ছেলে সৌরভ ও পাঁচ বছর বয়সি মেয়ে শায়ন্তী তাদের দাদির সঙ্গে অন্য কক্ষে ঘুমাচ্ছিল। হঠাৎ ছেলেমেয়ের ‘বাবা আগুন-আগুন’ চিৎকারে ঘুম ভাঙে আমার। ঘুম থেকে ওঠার পর সবাই এক রুমে একত্রিত হই। সে সময় বের হওয়ার দরজায় দেখি আগুনের লেলিহান শিখা। আগুনের তাপ সহ্য করা যাচ্ছিল না।

ছেলেমেয়েসহ সবাইকে আমার পিছু পিছু আসতে বলে আগুনের মধ্যেই আমি ঘর থেকে বের হয়ে যাই। কিন্তু তারা পারেনি। সেখানেই পুড়ে অঙ্গার হয় আমার সোনামণিরা। পুড়ে মারা যান আমার স্ত্রী লাকি, আমার বৃদ্ধ বাবা-মা।

বাম হাত এবং শরীরে ব্যান্ডেজ মোড়ানো অবস্থায় বেডে শুয়ে আছেন খোকন বসাক। মাথায় আগুন লাগায় ফেলে দেওয়া হয়েছে চুল। পাশে রয়েছেন তার স্বজন প্রিয়ন্তী দাশ। যন্ত্রণাকাতর খোকন বসাকের চোখ দিয়ে তখনো গড়িয়ে পড়ছিল পানি।

পারুয়া ইউনিয়নের মহাজনপাড়ার কাঙ্গাল বসাকের মেঝো ছেলে খোকন বসাক। তার আরও দুই ভাই ও দুই বোন রয়েছে। এর মধ্যে বড় ভাই রিকন বসাক ও ছোট ভাই সুজন বসাক অনেক আগেই ভারতে চলে গেছেন। তারা সেখানেই স্থায়ী হয়েছেন। দুই বোন রিনি ও ঝর্ণা দেশেই আছেন।

বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. লিটন কুমার পালিত বলেন, ‘দগ্ধ খোকন বসাকের শরীর ছাড়াও শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল। আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে এ ধরনের রোগীর অবস্থা যে কোনো সময় খারাপ হতে পারে।

সোর্সঃ যুগান্তর , HTPC,BdNews24 



ট্যাগগুলিঃ এটা কি স্রেফ দুর্ঘটনা, নাকি অন্য কোনো রহস্য আছে?,সংখ্যালঘু হিন্দু বাংলাদেশ, খোকন বসাক,বাংলা news,BdNews24,SomoyNews,Breaking news today,World news

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

আপনাদের ক্লিক এই Website টি সচল রাখার অর্থ যোগাবে।