Translate

ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন, মেরুদন্ডযুক্ত হিন্দুদের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করে করে দেওয়ার হাতিয়ার

বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের প্রধান ও অন্যতম হাতিয়ার

কলমেঃ কৃত্তিবাস কাশীরাম

সম্প্রতি পরিতোষ সরকারকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, সঙ্গে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা। 


কী করেছিল পরিতোষ সরকার?

২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর কুমিল্লার নালুয়া দিঘিরপাড় পূজামণ্ডপে কোরআন রেখে- বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক তাণ্ডবলীলা চালানো হচ্ছিল। ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নারী ধর্ষণ এবং পিটিয়ে মানুষ খুন করার প্রতিযোগিতা চলছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে বাংলাদেশের মিডিয়া ছিল সম্পূর্ণ নীরব। উল্টো তারস্বরে প্রচার চালানো হচ্ছিল যে, বাংলাদেশের মতন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নাকি পৃথিবীর অন্য কোন দেশে নেই। সামাজিক মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদ জানতে গিয়ে - একাধিক হিন্দু গ্রেপ্তার হয়ে যান এবং তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা দায়ের করা হয়।


ওই সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় হিন্দুদের বিরুদ্ধে সাংঘাতিক রকম উস্কানিমূলক অপপ্রচার চালানো হচ্ছিল এবং সনাতন ধর্ম সম্বন্ধে অশালীন সব মন্তব্য করা হচ্ছিল। সেই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে পরিতোষ সরকার নামের এক কিশোর, ‘ভালবাসার প্রস্তাব’ নামক একটি ফেসবুক আইডির কাবা ঘরের ছবিতে- অসংযত মন্তব্য করে বসে। যখন একটি কিশোর বয়সী ছেলে দেখে, তার ধর্মের বিরুদ্ধে অনবরত অশ্লীল-অবমাননাকর কটুক্তি করে যাওয়া হচ্ছে; তখন সে কিভাবে নিজের আবেগ সংযত রাখে!


২০২১ সালের ১৬ অক্টোবর রাতে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের মাঝিপাড়া গ্রামে- ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে হাজার হাজার ধর্মান্ধ মুসলমান, একতরফা ভাবে সাম্প্রদায়িক আক্রমণ চালায়। উন্মত্ত জনতা অবাধ লুটপাট-ভাঙচুর শেষে, ৩৯টি হিন্দু বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। হিন্দুদের গরু ছাগল, হাঁস মুরগি পর্যন্ত লুটে নিয়ে যায়।


লোকাল ওসি-কে উদ্ধৃত করে (২১ অক্টোবর ২০২১) Dhaka Post লিখেছে,

"ঘটনার ৪০ দিন আগে ফেসবুকে ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা নিয়ে, উজ্জ্বল হাসানের সঙ্গে মাঝিপাড়া এলাকার পরিতোষ সরকারের ফেসবুকে তর্কবিতর্ক হয়। পরিতোষকে শায়েস্তা করার জন্য, তার দেওয়া আপত্তিকর মন্তব্যের স্ক্রিনশট নিয়ে- বিভিন্নজনের কাছে পাঠায় উজ্জ্বল হাসান।"


যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িক হামলা চালালো, লুটপাট করলো, বাড়িঘর দোকানপাটে আগুন দিলো, হিন্দু নারী ধর্ষণ ও মানুষ হত্যার মতো জঘন্য সব অপরাধ করলো ― তাদের কারো উচিত বিচার হয়েছে কী? অথচ ফেসবুকে একটা কমেন্ট করার অপরাধে - ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে ১১ বছরের সাজা হয়ে গেল পরিতোষ সরকারের! বাংলাদেশে হিন্দুদের শাস্তি দেওয়ার বেলায়, আইন তার আপন গতিতেই চলে!


বাংলাদেশের হিন্দুদের ধর্মানুভূতিতে যথেচ্ছ আঘাত করা যাবে, সনাতন ধর্মের বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা তা-ই বলা যাবে। কোন হিন্দু প্রতিবাদ করতে পারবে না! প্রতিবাদ করলেই শানিত তরবারির মতো ঝলসে উঠবে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন! পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের নির্মূল করতে যেরকম ব্যবহার করা হয়েছে ব্লাসফেমি আইন, ঠিক সেভাবেই বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অপপ্রয়োগ চলছে। 


আজ পরিতোষ সরকারের সাজা হয়েছে, কাল আমার সাজা হবে, পরশু আপনাকে সাজা দেবে। কাউকে প্রতিবাদ করতে দেবে না।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

আপনাদের ক্লিক এই Website টি সচল রাখার অর্থ যোগাবে।