Translate

ভারতীয় কূটনীতি ও মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ

ভারতীয় কূটনীতি ও মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ

লেখকঃ নারায়ন দেবনাথ। রামায়ণ মহাভারত শুধু একটি মহাকাব্য নয় এর অন্তর্নিহিত ভাবাদর্শ নতুন ভারতের ঐতিহ্যকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। কূটনৈতিক ভাবে ভারত আন্তর্জাতিক দুনিয়ার সবাইকে তাঁক লাগিয়ে দিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মনে করেন এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে রামায়ণ মহাভারতের কৃতিত্ব। কূটনৈতিক স্তরে যা সম্ভব হয়েছে তার মূলে রয়েছে শ্রীকৃষ্ণ এবং হনুমানের কূটনৈতিক সমর্থন। রামায়ণ মহাভারত কেবল একটি মহাকাব্য নয় এরমধ্যে মানুষের জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত আশা-আকাঙ্ক্ষা ধর্ম-অধর্ম এসবের সমাধানই মহাভারত। কুরুক্ষেত্র ছিল মানুষের চিন্তার চারনভূমি। সেই চারনভূমিতে প্রতিনিয়ত লোভের সঙ্গে ত্যাগের সত্যের সাথে অসত্যের সংঘাত ঘটেছে।কৌরব চরিত্রে ফুটে উঠেছে ধ্বংসাত্মক সব ঘটনাবলী। আর পান্ডব চরিত্রে ছিল গঠনমূলক গুনাবলী। অর্জুন শিখিয়েছে নিষ্ঠা আর শ্রম। আর শ্রীকৃষ্ণ ছিল আমাদের আত্মা যা পরমাত্মার অংশ। যা আমাদের আলোর পথ দেখিয়েছে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণের কথোপকথন থেকে দেশ পরিচালনা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে যে গুরুত্বপূর্ণ দিক- নির্দেশনা তিনি দিয়েছেন তার অনুসরণ করেই ভারত এগিয়ে যাচ্ছে।


ইসলামী দেশগুলি কেনো পাকিস্তানকে সাহায্য করছে না?

স্বাধীনতার পর পাকিস্তান এবং চীন বরাবরই ভারতের প্রধান শত্রুদেশ হিসাবে চিহ্নিত। বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে মনে হয়নি পাকিস্তান ভারতের একটি শত্রুদেশ এবং এই শত্রুতার মূল উৎস ছিল ইসলামী ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ। কিন্তু বিজেপি সরকার মহাভারতের দর্শন কাজে লাগিয়ে শত্রুদেশ পাকিস্তানকে পরিনত করেছে একটি দেউলিয়া রাষ্ট্রে। এখন আর কোন ইসলামী দেশও পাকিস্তানকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে না। এখানেই মহাভারতের সাফল্য। শ্রীকৃষ্ণ শিশুপালের শতদোষ খন্ডন এবং ১০১দোষ করতেই তাকে হত্যা করেছিলেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পান্ডবেরা আত্মীয়দেরও বেছে নেয়নি। ভারতও প্রতিবেশীদের বেছে নেবে না। দুর্বলতা হল যেকোনো কাজের জন্য একটি অশনি সংকেত যা মহাভারতে শিখন্ডির কাছ থেকে শিখা যায়।


শকুনির থেকে আমরা কি শিক্ষা পাই? 

ভারতের অপর শত্রুদেশ চীন। কিন্তু তারা অর্থনৈতিক প্রযুক্তি সামরিক সব দিক থেকেই ভারতের থেকে এগিয়ে। কিন্তু পিছিয়ে কূটনীতিতে। চীনের বিরুদ্ধে ভারতের কূটনীতি সারা বিশ্বকে একসূত্রে গেথে নিয়েছে। মহাভারতে শকুনির কাছ থেকে মানুষ শিখেছে কূটকৌশল। তবে ভীষ্মকে দিয়ে আমরা গর্ব করা শিখেছি যা প্রতিজ্ঞা দিয়ে শুরু হয়। ভারত প্রতিজ্ঞাবদ্ধ চীনকে পর্যুদস্ত করতে তারা অভিমন্যুর যৌবন কাজে লাগাবে আর ভীমের কাছ থেকে শিখেছে বীরত্ব পৌরুষত্ব। ইতিমধ্যে গালোয়ান আর তাওয়াংএ ভারতীয় জোয়ানরা সে প্রমাণ রেখেছে।


ভারতকে কেনো ক্ষমতাসীন দেশগুলো মর্যাদা দেয়?  

ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পৃথিবী দুইভাগে বিভক্ত। একদিকে রাশিয়া আর অন্যদিকে আমেরিকা।আমেরিকার কোন কালেই ভারতের বন্ধু রাষ্ট্র ছিলনা। কিন্তু চীনকে কেন্দ্র করে রাশিয়া আমেরিকার দুই পক্ষই ভারতের দিকে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর আমেরিকার রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা আইন করে ভারতের জন্য প্রযোজ্য হবেনা বলে সিনেটে বিল এনেছে ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকান দুটি দল যা সাধারণত আমেরিকান রাজনীতিতে হয়না। ভারতের কূটনীতি এতটাই সফল যে ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী দুপক্ষই ভারতীয় পরম্পরাকে এতটা মর্যাদা দেয়।


ইরান আমেরিকার শত্রুদেশ। কিন্তু ভারত ইরান থেকেও তেল কিনে থাকে। দুর্যোধনরূপী চীনের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে লোভ আর দম্ভ। আর সেই দম্ভ চূর্ন করতে, ভারত-আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া আর জাপানকে নিয়ে গড়ে উঠেছে কোয়াড সামরিক চুক্তি। তাইওয়ান কিংবা দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আধিপত্য ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে খুব স্বাভাবিকভাবেই সরব আমেরিকার। কারণ সেখানে তাদের সরাসরি স্বার্থ জড়িত।কিন্তু এর আগে আমেরিকা ভারতের লাদাখ বা তাইওয়াং নিয়ে এতটা সোচ্চার হতে দেখা যায়নি। এবার আমেরিকা এ ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রাসী মনোভাব প্রকাশ করেছে। অরুনাচল প্রদেশ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে প্রস্তাব এসেছে গায়ের জোরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রন রেখার স্থিতাবস্থা পাল্টে দিতে চাইছে চীন এবং ভারত সে চেষ্টা রুখে দিচ্ছে। এই জন্য সব দেশের উচিত ভারতের পাশে থাকা।সিনেটে এ প্রস্তাব পেশ হয়েছে। এসব কিন্তু এমনি এমনি হয়নি। ভারতের কূটনীতি অনেক দূর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে। আমেরিকার ভালোই বুঝে ভারতের সাহায্য ছাড়া জলে স্থলে আকাশে চীনকে আটকানো যাবেনা। তাই ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল অস্ত্র ক্রয়ে আমেরিকার কোন বাধা নেই।

মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ

শুধু আমেরিকা নয়  ইউরোপকে ভারত বলেছে শুধু  ইউরোপের সমস্যা বিশ্ব সমস্যা পৃথিবীর আর কোন সমস্যা সমস্যা নয় এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নতুন ভারত বলছে 'তুমি যদি আমার কথা ভাব তাহলেই আমি তোমার কথা ভাবব'। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের এই মত মেনে নিয়েছে জার্মানি এবং সিকিউরিটি কাউন্সিলে জয়শঙ্করের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বিদূর যে আমাদের বিবেক তা আজ বিশ্ববিবেকে রূপলাভ করছে।


রামায়ণ মহাভারতের সাথে যে হিন্দু ঐতিহ্যের অস্তিত্ব জড়িত তা প্রমান করার জন্য বিজেপি সরকার মহাভারত রামায়ণের অস্তিত্ব খুঁজতে দিল্লিতে খনন কাজ শুরু করছে। পান্ডবদের জীবন শৈলী খুঁজে বের করার সাথে জড়িয়ে রয়েছে বিশ্বাস নিষ্ঠা পরম্পরা আর ধর্মাচরনের এক পবিত্র মানুষিকতা।


দুই মহাকাব্যের শিকড়ের খুঁজে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পুরানা কিল্লা মুঘল সম্রাট হুমায়ুন তৈরি করেছেন বলে মনে করা হয়।কিন্তু এর আগে সেখানে মৌর্য সাম্রাজ্যের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিল। এই খনন কাজের হাত ধরেই যাওয়া যেতে পারে মহাভারত ও রামায়ণের যুগে।


এই খনন কাজ নিয়েও সমালোচনা রয়েছে। বিশেষ করে যারা মুঘলদের ইতিহাসকে ভারতের ইতিহাস মনে করে এবং রামায়ণ মহাভারতকে একটি কল্পকাহিনীর সাথে বিবেচনা করেন তাদের কাছে এই খনন কাজ একটি চপেটাঘাত।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

আপনাদের ক্লিক এই Website টি সচল রাখার অর্থ যোগাবে।