Translate

Bengali and Muslim: বাঙালি ঐতিহ্যের সাথে মুসলিম ঐতিহ্য সাংঘর্ষিক

Bengali and Muslim

কলমেঃ নারায়ন দেবনাথ। হিন্দু বাঙালিদের সাথে মুসলিম বাঙালিদের সব ক্ষেত্রে একটা মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। অনেকে এটাকে ধর্মীয় জাতি বিদ্বেষ ঈর্ষা প্রবনরতা, বা সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তি বলে মনে করে থাকেন। কিন্তু এই বিভেদ বাঙালির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থেকে মুসলমানদের পৃথক করে দিয়েছে। 


হিন্দু মুসলমানের মধ্যে এই সংঘাত কার্যত দুটি জাতির মধ্যে সংঘর্ষ। তাঁর মূল প্রতিপাদ্য হল হিন্দু ও মুসলমান মূলত দুটি স্বতন্ত্র জাতি। তাদের ধর্ম,সংস্কৃতি,ইতিহাস,সাহিত্য,পরম্পরা,বিবাহ ও উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিধিমালা হিন্দুদের থেকে সম্পূর্ন পৃথক। এই পার্থক্য সুদূরপ্রসারী দৈনন্দিন জীবনের সর্বক্ষেত্রে তা প্রতিফলিত।হিন্দু মুসলিম একসাথে খাওয়া-দাওয়ার করে না,স্থাপন করে না পরস্পরের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক। হিন্দুদের রীতিনীতি,প্রথা কালগননা,আহার্য বেশভূষা সকল কিছুই মুসলিমদের থেকে স্বতন্ত্র। 


বাঙালী মূলত কোন অঞ্চলের অধিবাসী ও কেনো স্বাধীন জাতি? কেনো এই অঞ্চলের সংস্কৃতি ইসলামের সংস্কৃতিতে রুপান্তর হয়?

ঐতিহাসিক ভাবে বাঙালিরা ছিল দ:এশিয়ার বঙ্গ অঞ্চলের অধিবাসী। তারা ছিল বাংলাভাষী এবং অনার্য জাতিগোষ্ঠীর লোক। এই এলাকাটি ছিল গঙ্গা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিভক্ত একটি অঞ্চল। যা বাঙালি জাতিকে একটি স্বাধীন ভাষা ও সংস্কৃতি তৈরি করতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু প্রথম সহস্রাব্দে এ অঞ্চলে ইসলামের আগমনে বাঙালি সংস্কৃতি ও সভ্যতা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। পারস্য তুর্কি আরব ও মুঘলরা এই অঞ্চলে এসে নিম্ন বর্নের হিন্দুদের ভয়ভীতি 

হত্যা ধর্ষনের মতো অত্যাচার অবিচার করে বাঙালি হিন্দুদের ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে বাঙালি সংস্কৃতিকে ইসলামী সংস্কৃতিতে রূপান্তর করতে থাকে। সেই থেকেই বাঙালি ঐতিহ্য ইসলামী ঐতিহ্যে পরিনত হতে হতে আজ এখানে এসে উপনিত হয়েছে।


কোন কোন ক্ষেত্রে বাঙালীরা নিজ সংস্কৃতি থেকে সরে যাচ্ছে?

জাতিগত ভাবে বাঙালিদের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকার কথা নয়। শুধু ধর্মীয় কারনে এই বিভেদ বা পার্থক্য বাঙালিদের দুটি বিবাদমান জাতিতে পরিনত করেছে। যার প্রভাবে হিন্দু বাঙালিদের সাথে মুসলিম বাঙালিদের সর্বক্ষেত্রে বিস্তর পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।


খাদ্যাভ্যাস হারাম-হালাল,পোশাক শাড়ি-বোরকা হিজাব,জনাব,জনাবা,পানি-জল,দাওয়াত-নিমন্ত্রন,সম্বোধন-নমস্কার-আস্লামালিকুম,স্নান -গোসল,আশীর্বাদ -দোয়া,এমন প্রাত্যহিক হাজারো উপকরন রয়েছে যা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে পার্থক্য চিহ্নিত করে। কিন্তু এই পার্থক্য বাঙালি মুসলমানদের বাঙালির শাশ্বত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। এতে তারা দ্বিধাবিভক্ত। তাদের মধ্যে একটি শ্রেণী নিজেদের বাঙালি মনে করেন বিভেদার্থে। তাদের ধারণা মুসলমানদের যে ভাবধারা সেটাই বাঙালির আসল পরিচয়। অথচ ঐতিহাসিক সত্ত্বানুসারে বাঙালির যে আসল ঐতিহ্য তা কেবল হিন্দু বাঙালিদের মধ্যেই পাওয়া যায়। 


সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান কেনো নিজেদের মুসলিম পরিচয় দেয়?

অবশ্য এনিয়ে মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ নিজেদের মুসলিম পরিচয়ে নিজেদের সন্তুষ্ট মনে করে। কারন উৎস বিচারে ইসলাম একটি আরব ধর্ম। কিন্তু তারা ধর্মান্তরিত মুসলিম। কিন্তু সত্য হলো ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করার সাথে সাথেই তার মনোজগতে ঘটে আমূল পরিবর্তন।অতীত হারিয়ে যায় বিস্মৃতির অতল গহ্বরে। ইসলাম ব্যক্তিগত বিশ্বাস বা বিবেকের বিষয় নয়। তাদের পূন্য তীর্থস্থান আরবে আরবি তাদের পবিত্র ভাষা। নিজস্ব সত্ত্বা বিসর্জন দিয়ে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হোক তারা আরবীয় কাহিনির অংশবিশেষ। তাই তাদের ভাষা সংস্কৃতি আবর্তিত হয় ধর্মীয় ভাবাবেগে।


বাঙালী জাতির মানসিক প্রতিবন্ধকতা কোথা থেকে তৈরি হয়েছে?

এই পার্থক্যের মূল কারণ হলো মানুষিক প্রতিবন্ধকতা যার উদ্ভব হয়েছে ধর্মান্তর থেকে। এই উপমহাদেশের মুসলিমরা হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হয়েছেন। ফলে তাদের মধ্যে হিন্দুদের ভাবধারা কৃষ্টি সংস্কৃতির প্রতিফলন থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে হিন্দুদের মধ্যে যে শ্রেনীটি সবচেয়ে বেশি ধর্মান্তরিত হয়েছে সেটি ছিল কথিত অস্পৃশ্য এবং তুলনামূলক ভাবে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। ফলে জিনগত কারণে প্রাকৃতিকভাবেই এদের প্রভাব বর্তমান মুসলমানদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। এই চরম সত্য কথাটা বলা যায় না তাহলে আপনি হবেন জাতি বিদ্বেষী এবং সাম্প্রদায়িক।অথচ এটি বৈজ্ঞানিক ভাবে পরীক্ষিত একটি ঘটনা। 

রক্তের ধারা যেমন পরম্পরার অংশ ঠিক তেমনি এই বিদ্বেষও রক্তের ধারারই ধারাবাহিকতা। এর শেষ নেই এটি অনন্তের পথে এক অশনি সংকেত।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

আপনাদের ক্লিক এই Website টি সচল রাখার অর্থ যোগাবে।