পৃথিবীতে প্রথম প্রেমের বিয়ে | First love marriage in the world
কলমে নারায়ন দেবনাথঃ শিব-পার্বতীর মহা-মিলনের দিনই হল মহা শিবরাত্রি।এই রাত্রিতেই বিয়ে হয়েছিল মহাদেব ও পার্বতীর।প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে মহা শিবরাত্রি পালিত হয়ে থাকে।
কেনো নারীরা এই দিনে উপবাস ও ব্রত পালন করে থাকেন?
পুরান অনুযায়ী সতীর আত্মদানের পর শিব নিজের অস্তিত্ব বিলোপ করে বৈরাগ্যভাব ধারণা করেছিলেন। পরবর্তীকালে সৃষ্টির অমোঘ নির্দেশে এবং জগতের কল্যানে পার্বতী আবার অবতার রূপে অবতীর্ণ হয়ে শিব লাভে তপস্যা শুরু করেছিলেন।পার্বতীর এই তপস্যা ছিল একজন সতীনারীর সতীত্বের এক অগ্নিপরীক্ষা। এজন্যই এই দিনে মহিলারা উপবাস থেকে ব্রত পালন করে থাকেন স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনায়।আবার অনেক অবিবাহিত মেয়েরা শিবের মতো স্বামী পাওয়ার জন্য শিবরাত্রির উপবাস করে থাকেন।
ভগবান শিবকে কেনো মৃত্যুঞ্জয়ী বলা হয়?
যে নিত্য শিবের আরাধনা করে থাকে তার শক্তির বিকাশ হয়।আর যিনি ভক্তিভরে শিবের সেবা করে মানুষ তার নিশ্চিত মৃত্যুকে জয় করে।তাই তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী।শিব পরম মঙ্গলময় নির্গুণ,কখনো কারন বশত: তিনি সগুণ হন।তিনি সদাশিব তাই সকল বিদ্যাই তার মধ্যে অধিষ্ঠান করে।তাই তিনি পরমাত্মা।তার থেকেই প্রকৃতির উদ্ভব।প্রকৃতির ত্রিগুণের অতীত যিনি সত্ত্ব-রজ ও তম যার নাম উচ্চারণ করা মাত্রই মানুষ পাপমুক্ত হয়ে যায়।চির পবিত্র যিনি রজ বা তম দোষে দুষিত হননা।
জীবকে শিক্ষা দেয়ার জন্য তিনিই আবার সর্বশ্রেষ্ঠ ভগবদ্ভক্ত বৈষ্ণবানাং যথাশম্ভু।শিব শব্দের অর্থই হচ্ছে মঙ্গলময় বিশ্ববিধাতার প্রতীক।শিব শব্দের অপর এক অর্থ হল,মহাপ্রলয়ের পর যার মধ্যে অনন্ত মহাবিশ্ব নিদ্রিত অবস্থায় থাকে।আর লিঙ্গ শব্দের অর্থ যেখানে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ধ্বংসের পর সব বিলীন হয়ে যায়।বৈদিক শাস্ত্র অনুসারে জগতের সৃষ্টি পালন ও ধ্বংস পরমেশ্বর ভগবানের ত্রিগুণ অবতার দ্বারা সম্পন্ন হয়।তাই শিবলিঙ্গ স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবানের ও প্রতীকরূপে পরিগনিত হন।
কোন মন্ত্রে অসীম কীর্তির কথা উল্লেখ আছে?
শিবের প্রনাম মন্ত্রে রয়েছে তার অসীম কীর্তির কথা।সেই জন্যই বলা হয়ে থাকে শিবরাত্রি ব্রত করলে বহু জন্মের মহাপাপ দূরিভূত হয়।তিনি জ্ঞান দান করেন দারিদ্র ও দু:খ মোচন করেন এবং সর্বরোগের বিনাশ সাধন করেন।তিনি মায়া ও অজ্ঞানতাকে ধ্বংস করে পরম চৈতন্যের সঙ্গে ভক্তের মিলন ঘটান। এই মিলনের মাহাত্ম্যের মধ্যে রয়েছে এক অসীম শক্তি।এই শক্তি লাভই ছিল পার্বতীর সাধনার মূল মন্ত্র।সেই জন্য তাকে কঠোর তপস্যা করতে হয়েছিল।
কার তপস্যার জোরে পাহাড়ের ভিত নড়েছিলো?
তার তপস্যার জোরে পাহাড়ের ভিত নড়ে গিয়েছিল।তখন শিব নিজের ধ্যান ভঙ্গ করে পার্বতীকে কোন যুবরাজকে বিয়ে করে নিতে বলেছিলেন।কিন্তু পার্বতী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল তিনি শিবকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবেন না।শেষ পর্যন্ত পার্বতীর তপস্যায় শিব তুষ্ঠ হয়ে তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়।বিয়ের দিন ভোলানাথ গলায় নাগ পেচিয়ে গায়ে তোষ মেখে তার যত সহচর ভূত-প্রেত নিয়ে হাজির হলে পার্বতীর মা জামাইয়ের বেশভূষা আর সহচরদের দেখে তার সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে অস্বীকার করেছিল। পরে পার্বতী বিয়ের নিয়মনীতি অনুযায়ী তৈরি হয়ে আসতে শিবকে প্রার্থনা করলে শিব সেটা মেনে নিয়েছিলেন। পরে দেবতারা শিবকে ঐশ্বরিক সাজে সজ্জিত করে বিয়ের আসরে পাঠালে শিবের এই দিব্যরূপ দেখে সবাই বিমোহিত হয়ে যায় এবং ব্রহ্মার উপস্থিতিতে সেদিন বিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল। শিব-পার্বতীর এই বিয়ে ছিল সারা পৃথিবীতে প্রেমের প্রথম বিয়ে। এই দিনটি সেই জন্যই বিবাহিত এবং অবিবাহিত মহিলাদের কাছে অতি প্রিয় এবং আদর্শিক।