ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা: হিন্দুকূশ শব্দের অর্থই হচ্ছে ‘হিন্দু হত্যাকারী’
কলমে মুক্তমনা সুষুপ্ত পাঠকঃ হিন্দু কূশ পথ ধরে যেসব হিন্দু বৌদ্ধদের নারী পুরুষদের দাস বানিয়ে মুসলমান শাসকরা পারস্যের দাস বাজারে, বাগদাদে, কান্দাহার, গজনিতে বিক্রি করে দিতো। তাদের বংশধররা জন্মগত মুসলমান হিসেবে সবচেয়ে বেশি মূর্তি ও হিন্দু বিরোধী হয়েছিলো! হিন্দুকূশ শব্দের অর্থই হচ্ছে ‘হিন্দু হত্যাকারী’। কারণ ঐ দুর্গম পাহাড়ী কঠিন পথে এই দাসদের মধ্যে যারা খুব সৌভাগ্যবাণ (!) তারাই বেঁচে ফিরে দাস বাজারে বিক্রির জন্য উঠতে পারত! হিন্দুকুশ পথে মরে পড়ে থাকত হতভাগ্য এই স্থানীয়রা পশু পাথির মত।
আলেম মাওলানা আকরাম খাঁ এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা আকরাম খাঁ ছিলেন ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান। তাদের জ্ঞাতিদের বলা হতো ‘পিরালী বামুন’। অর্থাৎ আকরাম খাঁর পূর্ব পুরুষ কোন মুসলমানের হাতে জাত হারিয়ে মুসলমান হতে বাধ্য হয়েছিলেন। তিনি কিন্তু অস্বীকার করতেন তারা পূর্বে হিন্দু ছিলেন! তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন তারা এসেছিলেন আরব দেশ থেকে।
মুসলিমদের ভাষার নাম কি এবং এর ব্যাখ্যা
পৃথিবীর একমাত্র ‘মুসলমানের ভাষা’ হচ্ছে উর্দু। আরবীকে মুসলমান ভাষা বলা হয় না। আরবী ভাষা পৌত্তলিক আরবের ভাষা। বাংলা যেমন সংস্কৃত ভাষা থেকে জন্ম নিয়েছে যা আসলে প্রবলভাবে হিন্দুয়ানী। উর্দু একটি কৃত্রিম ভাষা। ভারতের মুসলিম শাসনে সিপাহীরা হিন্দির সঙ্গে আরবী ফারসি মিশিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে বাজার সদাই, লেনদেন করার জন্য একটি খিচুরি ভাষায় কথা বলত। স্থানীয় দোকানীরাও কাস্টমারের ভাষায় অভ্যস্থ হতে থাকে। ফলত এটি মুসলমানদের মুখের ভাষা হিসেবেই স্বীকৃতি পায়। গালিব বা মান্টোর মত সাহিত্যিক এই ভাষায় সাহিত্য রচনা না করলে এই ভাষা জাতে উঠত না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উর্দু মুসলমানদের ভাষাই থেকে গেছে। বাঙালি মুসলমানরা চাকরি বাকরির জন্য উর্দু ভাষাকে যেমন গ্রহণ করতে পারেনি তেমনি বাংলা ভাষাকেও পুরোপুরি মেনে নিতে পারেনি। পারেনি বলে এই ভাষায় আরবী ফারসি উর্দু গায়ের জোরে চাপাতে চেয়েছে।
উপমহাদেশের মুসলমানদের আত্মপরিচয় সংকট তীব্র। উপমহাদেশের মুসলমানদের মধ্যে যারা নিজেদের প্রগতিশীল উদার আধুনিক দাবী করেন তাদের মধ্যেই এই সংকট। যারা ধর্মান্ধ তাদের কাছে কোন সংকট নেই। তারা বিশ্বাস করে বখতিয়ার খিলজি, তৈমুর লং তাদের রুহানী পিতা। বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে বহু বছর ধরেই এক শ্রেণীর দাড়ি টুপিহীন নামাজ কালাম না করা মুসলমান বিদ্বেষ করে চলেছে যে এটা হিন্দুয়ানী। এদের যুক্তিগুলি শুনলে বুঝবেন কতখানি আত্মপরিচয় সংকট ও হিন্দু বিদ্বেষ এদের মনে।
পূর্ববঙ্গে মুসলমান কৃষকদের পাট বেচা টাকায় এখানকার মুসলমানরা কেন হিন্দু দেবদেবীদের কাহিনী পড়তে যাবে? এই যুক্তি এরা এখনো দেয় অবিভক্ত বাংলার সামাজিক অসন্তুষ্ঠ বুঝাতে। মুসলমানরা তাহলে কি পড়বে? পারস্যের সোহরাব রুস্তম, বিষাদ সিন্ধু লাইলি মজনু। এগুলো মুসলমানী ঐতিহ্য মনে করা হয়। রাধাকৃষ্ণ বা বেহুলা লখিন্দ হিন্দুদের। সেই হিন্দুদের বাদ দিতে গিয়ে এরা বিদেশীদের কীর্তকে নিজেদের মনে করল! এই তারাই কেমন করে বাঙালির নববর্ষকে নিজেদের মনে করবে?