Translate

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার উন্নয়ন | শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন

শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন

লেখক কৃত্তিবাস কাশীরাম: শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশে যথেষ্ট অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে - একথা অস্বীকার করা যাবে না। পাশাপাশি আর্থিক সেক্টরে - বিশেষ করে ব্যাংক, ফাইনান্স-লিজিং ও শেয়ার বাজারে কেবল পুকুর চুরি নয়- দস্তুরমতো সাগর চুরি হয়েছে। এছাড়াও ডেসটিনি, যুবক ও বিভিন্ন ইসলামী নামের তথাকথিত মার্কেটিং কোম্পানি খুলে - মধ্যবিত্তের সঞ্চয় লুটে নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে যদিও সরকার কিছু আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে; কিন্তু ঘুষখোর রাজ কর্মচারী ও দুর্নীতিবাজ রাজানুগতরা ― বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে; বেগম পাড়া বানিয়েছে। এই অবাধ লুণ্ঠন ও অর্থপাচারের ফলে, বাংলাদেশের অর্থনীতির নাভিশ্বাস উঠে গেছে। তবুও নৈশ-নির্বাচনের মিথস্ক্রিয়ায়-  ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজরা রয়ে গেছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।


শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের বহু এলাকায় সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে। তবে বিএনপি-জামায়াতের সংখ্যালঘু নির্যাতনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নির্যাতনের কিছু পার্থক্য রয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের সংখ্যালঘু নির্যাতনের উদ্দেশ্য ছিল - বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া; পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের নির্যাতনের উদ্দেশ্য ছিল হিন্দুর ভূমি দখল করা। বিএনপি-জামায়াতের অত্যাচারে লক্ষ লক্ষ হিন্দু দেশ ছাড়া হয়েছে; তবে আওয়ামী লীগের অত্যাচারে হিন্দুরা খুব একটা দেশ ছাড়া হয়নি।


বিএনপি-জামায়াতের আমলে যখন সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ― তখন আমেরিকা, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো প্রতিবাদ জানতো। রহস্যজনক কারণে আওয়ামী লীগের আমলে যখন সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে, তখন পাশ্চাত্যের দেশগুলো মুখে কসটেপ লাগিয়ে বসে থাকে।


পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্ব ব্যাংক সরে যাওয়ার পর, শেখ হাসিনার সরকার সুস্পষ্টভাবে চীনের বলয়ে চলে গেছে। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসার অনেক আগে থেকেই, বাংলাদেশের উপর চীনের গভীর প্রভাব বিদ‍্যমান ছিল। বাংলাদেশ চীনের বিরাট বাজার। চীন বাংলাদেশের প্রধান সমরাস্ত্র সরবরাহকারী। তার উপরে বাংলাদেশের উপর আধিপত্য বজায় রাখতে, চীনের হাতে রয়েছে 'রোহিঙ্গা ইস্যু' নামক শক্তিশালী একটি অস্ত্র।


শেখ হাসিনা সরকারের বৃহৎ বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প গুলোর সিংহভাগ অর্থ এসেছে চীন থেকে। বহু চাইনিজ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ঠিকাদারি করছে। সঙ্গত কারণেই আমেরিকার সেটা পছন্দ নয়। আমেরিকা শেখ হাসিনার সরকারের উপর নানা ধরনের চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করলেও- মোটেও সুবিধা করে উঠতে পারছে না।

 

ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমল থেকেই আমেরিকা, দক্ষিণ এশিয়া থেকে হাত গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আফগানিস্তান থেকে ন্যাটোর সৈন্য প্রত্যাহার তারই ধারাবাহিকতা। বর্তমান পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকার পক্ষে চীনের সঙ্গে টক্কর দেওয়া সম্ভব নয়।


একটা উদাহরণ দেই। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় দেশ ভারত - জনসংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র। ২০২০ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে চীনের গুরুতর সীমান্ত সমস্যা চলছে। হলে কি হবে, গত অর্থবছরে চীন ভারতের কাছে ৯৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। বিপরীতে ভারত চীনের বাজারে রপ্তানি করতে পেরেছে মাত্র ২১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। অর্থাৎ ভারতের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ৭৩ বিলিয়ন ডলার। যেটা ভারতের মোট প্রতিরক্ষা বাজেটের সমান এবং বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় দেড় গুণ।


এহেন বাস্তবতায়, আওয়ামী লীগ সরকারের কেশাগ্র স্পর্শ করার ক্ষমতা আমেরিকার নেই। অন্তত যতদিন শেখ হাসিনার সরকারের উপর চীনের ছত্রছায়া থাকবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url