Translate

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দু ধর্মালম্বী তাই তিনি এখন আর বাংলাদেশের অনুপ্রেরনা নন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দু ধর্মালম্বী তাই তিনি এখন আর বাংলাদেশের অনুপ্রেরনা নন

লেখক নারায়ন দেবনাথ: রবি ঠাকুর হিন্দু কবি তাই বাংলাদেশের অধিকাংশ মুমিন মনে করেন কাফেরের লেখা কোন গান কবিতা প্রবন্ধ ৯০% মুসলমানের দেশে না জায়েজ।তাই এই কাফেরের লেখা জাতীয় সঙ্গীত সে দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানে (মাদ্রাসায়) গাওয়া হয়না পাঠ্যপুস্তক থেকে কবির লেখা পর্যায়ক্রমে তুলে নেয়া হচ্ছে।এবং তিনি মুসলিম বিদ্বেষী সেজন্য নাকি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বাধা দিয়েছিলেন।


কথাগুলো মিথ্যা কিংবা সাম্প্রদায়িক মনে হতে পারে। কিন্তু প্রতিনিয়ত এই কথাগুলোই বাংলাদেশের বিভিন্ন মাদ্রাসা মক্তব বা বিভিন্ন ইসলামি জলসায় মুমিনদের উদ্দেশ্যে বলা হয়ে থাকে।এমনও বলা হয় কবি গুরুর নোবেল পুরস্কার নাকি কাজী নজরু ইসলামের কাছ থেকে চুরি করে রবি ঠাকুরকে দেয়া হয়েছে।কথাগুলো যখন জলসায় বলা হয় তখন মুমিনরা কোরানের আয়াতের মতোই তা বিশ্বাস করেন। আর এই বিশ্বাস বাংলাদেশের মুমিনদের মধ্যে সৃষ্টি করেছে কবির প্রতি বিদ্বেষ, হিন্দুদের প্রতি জাতিবিদ্বেষ প্রতিহিংসায় সৃষ্টি হয়েছে সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তি এবং চরম ধর্মান্ধতা।


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার পান ১৯১৩ সালে ৫৩ বছর বয়সে তখন কাজী নজরুল ইসলামের বয়েস মাত্র ১৪ বছর।তখনো তার একটি কবিতাও প্রকাশিত হয়নি।নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে।জন্মসূত্রে নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের লোক নন।তাকে অসুস্থ আবস্থায় ঢাকা আনা হয়েছিল একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি ছিলেন ভারতীয় নাগরিক।কিন্তু  মৃত্যুর পর তার লাশ ফিরিয়ে দেয়া হয়নি মুসলিম কবি হিসাবে তাকে জাতীয় কবির স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল।জন্মসূত্রে নজরুল বাংলাদেশের লোক নন।তারপরও তার লেখায় ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট।কিন্তু এর কোন সমালোচনা নেই শুধু রবীন্দ্রনাথ ভারতে জন্মগ্রহণ করে  কিভাবে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা হয় এনিয়ে যত সমালোচনা? আসলে উদ্দেশ্য হল জাতি বিদ্বেষ টেনে এনে ধর্মের বেড়াজালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অসম্মান করা।অপর দিকে কাজী নজরুল ইসলাম একজন মুসলিম কবি।কিন্তু তিনি হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতি নিয়ে যে ধরনের কবিতা গান রচনা করে গিয়েছেন তা ইসলামিক দৃষ্টিতে কুফরি রচনা।কিন্তু বাংলাদেশের মুমিনরা কবি নজরুল একজন মুমিন মুসলিম কবি সে হিসাবেই গৌরবান্বিত।


এক সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অনুপ্রেরণা ছিল রবি ঠাকুরের "আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালো বাসি"।কিন্তু সে গান এখন আর কেউ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে গায় না বিজ্ঞপ্তি জারি করে গাওয়াতে হয়।এই অবস্থাটা পাকিস্তান আমলেও ছিল।তখন মোনায়েম খাঁন রবীন্দ্র সঙ্গীতের পরিবর্তে হাই সঙ্গীত প্রচলনের চেষ্টা করেছিলেন।স্বাধীন বাংলাদেশেও কওমী মাদ্রাসার তত্ত্বাবধানে একই সুরে জাতীয় সঙ্গীত রচনা হয়েছিল।


বাংলাদেশে জাতিবিদ্বেষ এমন এক পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে রবীন্দ্র সংস্কৃতি সেদেশে একটি বিজাতীয় সংস্কৃতিতে পরিনত হয়েছে।এর সাথে যে শুধু তৌহিদি জনতা জড়িত এমন নয় লেখাপড়া জানা ইসলামি আদর্শের নামে সমাজের সব স্তরে এই বিদ্বেষ এমন ভাবে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলাদেশে একজন কাফের কবি হিসাবেই চিহ্নিত।


এসব কথার সত্যতা পাওয়া যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড:মেজবা উদ্দিনের গলায়।তিনি এক সেমিনারে বলেছেন,"ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন একটা উচ্চতর মাদ্রাসায় পরিনত হয়েছে।আমি জেনে বুঝে ৩৪বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছি তার আগে ৬বছর পড়েছি ৪০ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমি সম্পর্কিত।আমি বলছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চোখের উপরে একটা ছায়ার মাদ্রাসায় পরিনত হতে দেখছি এটা কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়"

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url